সম্প্রতি, হিজাব পরে যাওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের শো-রুমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এক নারীকে’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হিজাব পরে যাওয়ায় আড়ংয়ের শো-রুমে ঢুকতে না দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা বরং ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে মাস্ক পরে না আসায় আড়ংয়ের শোরুমে ঢুকতে না দেওয়ার ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি আড়ংয়ের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলছেন।
ওই ব্যক্তি বলেন, আমি বলতে চাচ্ছি যে আপনারা যে মাস্ক পরে রয়েছেন এটা মাস্ক আর এই নেকাব মাস্ক না কেন? আমি এটার ব্যাখ্যা চাচ্ছি আপনাদের কাছে৷ আপনার এটা মাস্ক হয় কীভাবে? আপনার এটা কি কোনো মেডিক্যাল অর্থরাইজেশন আছে কি না?… আপনি আমাকে ঢুকতে দেন নাই রেজিষ্ট্রেশন করার পরেও, তাই না? নেকাব কেন মাস্ক না আর আপনারটা কেন মাস্ক এটা আমাকে ব্যাখ্যা দেন প্লিজ!
তিনি আরও বলেন, আমি এখন গুলশান আড়ংয়ে আছি৷ আমার এখানে একটা জিনিস চেঞ্জ করবো। আমার ওয়াইফ মাস্কটা নিয়ে আসে নাই, বাচ্চাটা আছে। এখন তার নেকাবটাকে মাস্ক বলতে চাচ্ছে না তারা৷ বাট তারা যেটা পরে আছে সেটা কীভাবে মাস্ক হয়? আমি এই জিনিসটা সবার কাছে প্রশ্ন করছি!
এই ব্যক্তি এবং আড়ং কর্তকর্তার কথপোকথন থেকে বুঝা যাচ্ছে, মাস্ক না আনায় আড়ংয়ে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
পরবর্তীতে ফেসবুকে ম্যানুয়ালি অনুসন্ধানে সালের ‘শাবীব তাশফি’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়,, “এদেরকে থামানোর মতো কেউই কি নেই? কাপড়ের মাস্ক মুখে লাগিয়ে সেলসম্যানরা হরদম ডিউটি করছে। অথচ মুখে নিক্বাব লাগানো থাকার কারণে বোরকাবৃত মহিলাদেরকে আড়ং ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না! কিছুদিন আগে এক ভাই পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রীকে আড়ংয়ের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আর আজ এই ভাইয়ের ভিডিওটা সামনে এলো। কর্তৃপক্ষের মূল আপত্তি কি মাস্ক না পড়ায়? নাকি নিক্বাব আর হিজাবেই আপত্তি? এরা তো আল্লাহর বিধান অথবা দুনিয়ার বিজ্ঞান কোনোটাই মানছে না। এদের রব্ব কি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কেউ? অফিসের বসরাই কি এদের রব্ব? প্লিজ, এদেরকে থামান! আমাদের স্ত্রী, বোনদেরকে এরা পদে-পদে হেনস্তা করছে। দিনদিন এদের ধৃষ্টতা বহুগুণে বেড়েই চলেছে।”
পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের মন্তব্যঘর পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে ভিডিওর আলোচিত নারীর আত্মীয় দাবি করা শহীদুল হাসান নামের এক ব্যক্তির একটি মন্তব্য পাওয়া যায়। সেখানে তিনি বলেন,
“গতকাল (৬ আগস্ট, ২০২০) বিকেলের ঘটনা।
পরে ঢুকতে দিছে ভাই। একটা মাস্ক ও গিফট করতে চাচ্ছিলো। নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে যে নেকাব কে মাস্ক হিসেবে এপ্রুভ করবেন অথবা আড়ং এর সকল কর্মী সার্জিক্যাল মাস্ক পড়তে হবে তাহলেই উক্ত নিকাব পড়া মহিলা মাস্ক পড়েই ঢুকবে।
তখন তারা হার মেনে ও যুক্তিতে না পেরে ঢুকতে দিয়েছে সসম্মানেই।”

অর্থাৎ, করোনাকালীন সময়ে আড়ংয়ের গুলশান শো-রুমে মাস্ক পরে না যাওয়ায় ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনার ভিডিও এটি। যা প্রায় ৪ বছর পূর্বের ঘটনা। যার সাথে আলোচিত দাবির কোনোপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
মূলত, সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের একটি পাঞ্জাবির নকশার প্রিন্ট ডিজাইনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বলা হচ্ছে, আড়ং সমকামিতার চিহ্ন সম্বলিত প্রিন্ট বসিয়ে পাঞ্জাবি বিক্রি করছে৷ এরই মধ্যে ‘হিজাব পরে যাওয়ায় আড়ং শোরুম ঢুকতে দেওয়া হয়নি’ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি বিবেচনায় আড়ংয়ের গুলশানের একটি শো-রুমে মাস্ক পরে না যাওয়ায় এক নারীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সেই সময়কার ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, হিজাব পরে যাওয়ায় আড়ংয়ের শোরুমে নারীকে ঢুকতে না দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার।
তথ্যসূত্র
- Shabab Tashfi- Facebook Post
- Rumor Scanner’s Own Analysis