সম্প্রতি, “হঠাৎ খালেদাকে দেখতে আসলেন হাসিনা,খালেদাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছালো হাসিনা” শীর্ষক শিরোনাম এবং একই তথ্য সম্বলিত থাম্বনেইলে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে আসেননি এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর কোনো ঘটনাও ঘটেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার একাধিক পুরনো ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পুরোনো ঘটনার ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যেখানে আলোচিত দাবিটি প্রসঙ্গে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন এবং সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির একটি ভিডিও দেখানো হয়।
উক্ত ভিডিওটিতে দেখানো ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ক্লিপের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চালায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিও যাচাই
অনুসন্ধানের শুরুতেই সময় টেলিভিশন এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সময় টেলিভিশন এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি “সেদিন কেঁদেছিলেন খালেদা জিয়া,বিমর্ষ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।Arafat Rahman koko। Khaleda Zia” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড সময় থেকে ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার বাসভবন গুলশানের ফিরোজায় দেখা করতে যান।
ভিডিওটির পরবর্তী অংশে চ্যানেল ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনের খণ্ডাংশ দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে চ্যানেল ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ “মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া” শীর্ষক শিরোনাম একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির প্রথম কয়েক সেকেন্ড অংশটুকু আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়।
উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের প্রথম অংশে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়।
ভিডিওটির সর্বশেষ অংশে সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনিকে দেখানো হয়। উক্ত ভিডিওটির অনুসন্ধানে গোলাম মাওলা রনির ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর “বেগম জিয়াকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী যাবেন! ইটা কেমন দুঃস্বপ্ন!” শীর্ষক শিরোনামে একই ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটিতে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে যাবে বলে ধারণা করেন তিনি এবং এ বিষয়ে তিনি তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন।
এই ভিডিওগুলো কোনো প্রকার প্রাসঙ্গিকতা ছাড়াই আলোচিত ভিডিওটিতে যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরনো যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে খালেদা জিয়াকে দেখতে আসলেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে ব্যাবহৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Bangladesh Awami league’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ “HPM Sheikh Hasina visits Zafar Iqbal at CMH”শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে ব্যবহৃত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যাবহৃত ছবিটিকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যাবহার করা হয়েছে।
মূলত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এবং মামলা চলমান রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে “হঠাৎ খালেদাকে দেখতে আসলেন হাসিনা,খালেদাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছালো হাসিনা” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং ছবি যুক্ত করে তাতে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, খালেদা জিয়াকে দেখতে আসলেন শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে প্রচারিত তথ্যগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV : সেদিন কেঁদেছিলেন খালেদা জিয়া,বিমর্ষ ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।Arafat Rahman koko। Khaleda Zia
- Channel 24 : মুক্তি পেলেন খালেদা জিয়া
- Golam Maula Rony : বেগম জিয়াকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী যাবেন! ইটা কেমন দুঃস্বপ্ন!