কাতার বিশ্বকাপে শিয়াকত আলীর রেফারি হওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর

সম্প্রতি “কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রেফারি হিসেবে দেখা যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিয়াকত আলীকে।” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কাতার বিশ্বকাপে শিয়াকত আলীর রেফারি হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় বরং রেফারিদের সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি। 

কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক সংস্থা ‘ফিফা’র ওয়েবসাইটে গত ১৯ মে “36 referees, 69 assistant referees and 24 video match officials appointed for FIFA World Cup Qatar 2022™” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে ফিফা জানায়, কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ৩৬ জন রেফারি, ৬৯ জন সহাকারী রেফারি এবং ২৪ জন ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়াল নিয়োগ দিয়েছে সংস্থাটি। এই তালিকায় এবারই প্রথমবারের মতো তিনজন নারী রেফারি এবং তিনজন সহকারী রেফারি নিয়োগ দিয়েছে ফিফা। 

পরবর্তীতে ফিফার ওয়েবসাইটে ম্যাচ অফিশিয়ালদের পূর্ণতালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। তালিকায় শিয়াকত আলী বা বাংলাদেশের কারো নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ, কাতার বিশ্বকাপে শিয়াকত আলীর রেফারি হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 

অনুসন্ধানে ইউটিউবে মূল ধারা গণমাধ্যম ‘RTV News’ এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৬ অক্টোবর “কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন যিনি” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

শিয়াকত আলীর সাক্ষাৎকার নিয়ে উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে শিয়াকত বলেন, “ফিফা কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া রেফারিদের জন্য ফিফা এবং কাতার ফুটবল এসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে রেফারি গাইডার এবং কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়া দশজনের মধ্যে আমিই একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ান হিসেবে সুযোগ হয়েছে।”

একাধিক দেশীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে শিয়াকতের রেফারি সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। (দেশ রুপান্তর, নয়া দিগন্ত, আজাদী)

তবে ফিফা এবং কাতার ফুটবল এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পায়নি রিউমর স্ক্যানার। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে কাতার ফুটবল এসোসিয়েশনে যোগাযোগ করলে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রিউমর স্ক্যানারকে জানানো হয়, এ ধরনের বিষয়গুলো ফিফার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তাই তারা ফিফার সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে ফিফার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। কিন্তু এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। 

রেফারি সমন্বয়কারীর কাজ কী?

ফিফা বা কাতার ফুটবল এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে রেফারি সমন্বয়কারী বিষয়ক কোনো নির্দেশনা দেওয়া নেই। তবে বৈশ্বিক ফুটবল টুর্ণামেন্টসহ ফুটবলের বিভিন্ন টুর্ণামেন্টেই ‘রেফারি সমন্বয়ক’ একটি পরিচিত পদ। এই পদে যারা থাকেন, তারা মূলত রেফারিদের নিয়োগ এবং রেফারিদের মধ্যে সমন্বয়, সুযোগ সুবিধা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখেন। তবে বিশ্বকাপের রেফারিদের সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে রেফারি৷ তাই শিয়াকত মূলত, রেফারিদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা, সমন্বয় এবং তাদের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো দেখার কাজটি করবেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। 

মূলত, চলতি বছর কাতারে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য রেফারি, সহকারী রেফারি ও ভিডিও অফিশিয়ালদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় থাকা রেফারিদের মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া দশজনের মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ান বাংলাদেশের শিয়াকত আলী। গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তেমনটাই জানিয়েছেন। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রেফারি হিসেবে শিয়াকত আলীকে দেখা যাবে শীর্ষক একটি দাবি সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ছেলে শিয়াকত কাতারে যান ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালে রেফারি হতে কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের একটি পরীক্ষায় বিভিন্ন দেশের ১৬৫ জন রেফারির মধ্যে প্রথম হন শিয়াকত। বর্তমানে কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত ম্যাচ পরিচালনাকারীদের একজন শিয়াকত।  

প্রসঙ্গত, আগামী ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসর শুরু হতে যাচ্ছে। 

সুতরাং, কাতার বিশ্বকাপে শিয়াকত আলীর রেফারি হওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img