সিল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ নয়

দীর্ঘদিন ধরেই গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে সিল্যান্ড নামক একটি স্থানকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম/ছোট দেশ শীর্ষক একটি দাবি প্রচার হয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে (২০২৩) একই দাবিতে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন নিউজ২৪

Screenshot source: News24

বিগত কয়েক বছরে একই দাবিতে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন 

২০২২ – The Financial Express, কালবেলা

২০২১ – একাত্তর টিভি, রিদমিক নিউজ, জাগো নিউজ, ইত্তেফাক, বাংলা ইনসাইডার, ডিবিসি নিউজ, সময় টিভি (ইউটিউব)।

২০২০ – বাংলা ট্রিবিউন

২০১৭- কালের কণ্ঠ, আরটিভি, বাংলা২৪ লাইভ নিউজপেপার, পূর্ব পশ্চিম বিডি, বাংলাদেশ প্রতিদিন

২০১৬- সমকাল

ফিচার প্লাটফর্ম রোর বাংলা ২০১৮ সালে একই দাবিতে একটি ফিচার আর্টিকেল প্রকাশ করেছিল। দেখুন এখানে। 
সাম্প্রতিক সময়ে উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

Screenshot source: Facebook

একই দাবিতে বিগত বছরগুলোর কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন 

একই দাবিতে ইউটিউবের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে বিগত বছরগুলোয় ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন দেখুন জি নিউজ, দ্য ওয়াল

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিল্যান্ড পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বা ছোট দেশ নয় বরং পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম বা ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি।

কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যমতে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হলো ‘স্টেট অব দ্য ভ্যাটিকান সিটি অর হলি সি’, শুধু ভ্যাটিকান সিটি নামেই যা বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

Source: Guinness Book of world records

History.com এর একটি নিবন্ধেও ভ্যাটিক্যান সিটি’কে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র দেশ বলা হয়েছে। 

Source: History.com

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পৃথিবীর স্বীকৃত দেশসমূহের মধ্যে ভ্যাটিকান সিটি-ই ক্ষুদ্রতম।

কেন সিল্যান্ডকে ক্ষুদ্রতম দেশ দাবি করা হচ্ছে?

সিল্যান্ড দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত একটি সামরিক সমুদ্র দুর্গ। নৌপথে জার্মান আগ্রাসন ঠেকাতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এই নৌ-দুর্গটি নির্মাণ করে। শত্রুপক্ষের গতিবিধি শনাক্ত করা-ই ছিল এই দুর্গ নির্মাণের উদ্দেশ্য। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেমে গেলে এই দুর্গ নিজের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মেজর রয় বেটস ১৯৬৭ সালের দিকে এই দুর্গে ঘাঁটি গড়েন। এরপর তিনি সিল্যান্ড’কে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। শুধু তাই নয় এদেশের রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, মুদ্রা এবং রাজধানী! তবে, এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থা সিল্যান্ড’কে স্বীকৃতি দেয় নি। জেনে রাখা ভালো, সিল্যান্ড পৃথিবীর একমাত্র আত্মঘোষিত ক্ষুদ্র দেশ নয়। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০০ টির অধিক ক্ষুদ্র জাতি বা মাইক্রোনেশন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মাইক্রোনেশন হলো ক্ষুদ্র এলাকা নিয়ে গঠিত একটি স্বঘোষিত রাষ্ট্র, যাদের কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। মূলত, ইতিহাসে বহু ব্যক্তি/ পরিবারকেন্দ্রিক মাইক্রোনেশন গড়ে উঠেছে। তবে, পৃথিবীর সার্বভৌম দেশ হিসেবে অন্য কোনো রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের স্বীকৃতি দেয় নি। 

সিল্যান্ড কেন দেশ নয়?

তথ্য ও শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট Though.co এবং Info please এর তথ্যমতে, আধুনিক পৃথিবীতে একটি স্বাধীন দেশের ৮ টি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। এগুলো হলো, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্দিষ্ট সীমারেখা, স্থায়ী জনবসতি, অর্থনৈতিক কাঠামো, সামাজিক সক্ষমতা (যেমন: শিক্ষা), পণ্য ও গণপরিবহন ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এর মধ্যে সিল্যান্ড-এর শুধুমাত্র একটি স্বঘোষিত সরকার ব্যবস্থা রয়েছে। যা পরিবারতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। অন্য সকল ক্ষেত্রে, সিল্যান্ড একটি দেশ হিসেবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ। ফলে, আধুনিক পৃথিবীতে সিল্যান্ড’কে প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশ হিসেবে বিবেচনা-ই করা যায় না।

মূলত, সিল্যান্ডকে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বা ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে যে তথ্য প্রচারিত হয়ে আসছে তা সঠিক নয়। সিল্যান্ড কোনো স্বীকৃত দেশ নয় বরং এটি একটি আত্মঘোষিত ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বা মাইক্রোনেশন। স্বীকৃত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ হলো ভ্যাটিকান সিটি।

সুতরাং, ‘সিল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ’ শীর্ষক একটি দাবি বিগত কয়েক বছর ধরে প্রচার হয়ে আসছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img