সম্প্রতি, “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দিচ্ছেন ড. ইউনূস” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দেওয়ার কোনো ঘোষণা ড. ইউনূস বা বিকাশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বরং, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভাতা প্রদানের এই প্রলোভন দেখানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত পোস্টগুলোতে থাকা ওয়েবসাইট লিংকে প্রবেশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করলে উপরে বিকাশের লোগো এবং “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দিচ্ছেন ড. ইউনূস” শীর্ষক একটি লেখা পাওয়া যায়। এরপর বলা হয়, “এই ৪০০০ টাকা উপহার আপনি বিকাশে নিতে পারবেন”৷

মোঃ শামীম ও শেখ রুনা নামে দুইটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য সদৃশ মন্তব্যেরও সংযুক্তি পাওয়া যায় যেখানে দেখা যায় উপরোল্লিখিত দুই ব্যক্তি বলছেন তারা বিকাশে ৪০০০ টাকা পেয়েছেন। এরপর বিস্তারিত অংশে বলা হয়, “১৭ বছরের বেশি বয়সী সকল নাগরিক ৪০০০ নাগরিক ভাতা পাবে। ১টি বিকাশে সর্বোচ্চ ১বার পাওয়া যাবে। ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা পেতে আপনাকে নিচের ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরণ করার সাথে সাথে আপনার বিকাশ একাউন্টে ৪০০০ টাকা চলে যাবে”।

আরেকটু নিচে স্ক্রল করলেই টাকা পাওয়ার জন্য একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে বলা হয়। ফর্মটিতে নিজের নাম, গ্রাম/এলাকার নাম, জেলা, কত বছর যাবৎ বিকাশ ব্যবহারকারী, এই মূহুর্তে (ফর্ম পূরণ করার মুহূর্তে) বিকাশ অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন/Student ID নম্বর, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না, বিকাশ সার্ভিস কেমন লাগে এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী নিরাপত্তাজনিত কারণে ভুল তথ্য দিয়ে উক্ত ফর্ম পূরণ করে জমা দিলে এটি আরেকটি নতুন পেজে নিয়ে যায়। উক্ত নতুন পেজটিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য করে রিউমর স্ক্যানার টিম। নতুন পেজের ইন্টারফেসটি হুবহু বিকাশে পেমেন্ট করার ইন্টারফেসের মতো। তাছাড়া, দাবি অনুসারে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারীর ৪,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও নতুন ইন্টারফেসটি হচ্ছে কাউকে টাকা পেমেন্ট করার ইন্টারফেস। অধিকন্তু, এখানে পেমেন্ট গেটওয়ের জায়গায় বিকাশ কর্তৃপক্ষের কোনো কিছুর বদলে “MANTI JEWELLERY” নামটি দেখা যায়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পূর্ববর্তী ফর্মে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে আছে হিসেবে উল্লেখ করা ২৩০০০ টাকাই এখানে পেমেন্টের পরিমাণ। এরপর বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার চাওয়া হয়।
এ পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী বিকাশহীন নিজের একটি নাম্বার দিলে “Not a customer Wallet” লেখাটি প্রদর্শন করে, যা প্রমাণ করে এটি বিকাশের আসল পেমেন্ট পেজেই নিয়ে এসেছে৷ তাছাড়া এ বিষয়ে বিকাশের ডোমেইন নাম দেখেও নিশ্চিত হওয়া যায়৷
তবে, উক্ত একই ফর্ম একটু পর পুনরায় পূরণ করলে এবার পেমেন্ট গেটওয়ের জায়গায় “BABU ENTERPRISE” নামে ভিন্ন আরেকটি নাম দেখা যায়। তবে আগের বারের মতো এবারও বিকাশ অ্যাকাউন্টে সর্বমোট উল্লেখ করা টাকার পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেমেন্টের পরিমাণে চলে আসে।

তারপর সঠিক বিকাশ নাম্বার দিলে ওটিপি চাওয়া হয়। সঠিক ওটিপি দিলে পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়৷ অর্থাৎ, বিকাশ নাম্বার, ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড ঠিকভাবে বসালে অ্যাকাউন্টে থাকা তথা ফর্মে উল্লেখ করা টাকা প্রতারকের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। কিন্তু, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানকারী সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে সর্বশেষ ধাপটি সম্পন্ন করেন নি।

উক্ত ফর্মটি ঘন্টাখানেক পর পুনরায় পূরণ করলে এবার ভিন্ন আরেকটি ইন্টারফেস দেখা যায়। এবার বিকাশের পেমেন্ট পেজে নিয়ে বিকাশ নাম্বার চাওয়ার বদলে আরেকটি পেজে নিয়ে যাওয়া হয়। উক্ত পেজটিতে বলা হয়, “অভিনন্দন প্রিয় গ্রাহক! আপনি টাকা বোনাস পেয়েছেন। আপনি যে বিকাশে বোনাসের টাকা নিতে চান, নিচে সেই বিকাশ নম্বর এবং অন্যান্য তথ্য দিন।” এরপর মোবাইল নম্বর এবং পিন চাওয়া হয়৷

রিউমর স্ক্যানার টিমের একজন অনুসন্ধানকারী সঠিক বিকাশ নাম্বার এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ভুল পিন নাম্বার দিয়ে “বোনাস নিন” বাটনে ক্লিক করলে এটি ৬ সংখ্যার একটি ওটিপি দিতে বলে। উল্লেখ্য যে, ৬ সংখ্যার ওটিপি রিউমর স্ক্যানার টিমের উক্ত অনুসন্ধানকারীর মোবাইলে বিকাশ থেকে এসেছিল। অর্থাৎ, সব তথ্য এবং পিন সঠিকভাবে দিলে প্রতারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
পরবর্তী অনুসন্ধানে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দেওয়ার কোনো ঘোষণা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা বিকাশ দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করতে প্রাসঙ্গিক কী-ওয়ার্ড সার্চ করলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ওয়েবসাইট, বিকাশের ওয়েবসাইট, গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দিচ্ছেন ড. ইউনূস শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।