সাবেক দুই সিইসিসহ ঢাবির বর্তমান ও জবির সাবেক ভিসির যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের গুজব

সম্প্রতি, ‘সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৪ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মার্কিন ভিসা বাতিল!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

ব্যক্তি চারজন হলেনঃ

  • সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ
  • সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান
  • এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট(আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট(আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট(আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করলেও এই নীতির আওতায় এখন পর্যন্ত কাউকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কোনো তথ্যসূত্র ছাড়াই এই চার ব্যক্তির ভিসা নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিহীন দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার  কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের আমেরিকার ভিসা বাতিল সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে তাদের আমেরিকান ভিসা বাতিলের দাবিটি সম্পর্কে অধিকতর অনুসন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে উক্ত বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।  

Screenshot: U.S. Department of the treasury

বরং সবশেষ প্রকাশিত স্যাংশন বা ভিসা বাতিলের তথ্য সমূহ যাচাই করে দেখা যায়, দেশটি গত ২৪ জুলাই আফ্রিকান দেশ মালিতে রাশিয়ান ভাড়াটে সেনা ওয়াগনার গ্রুপের উপস্থিতি সহজতর ও প্রসারিত করার জন্য সহায়তার অভিযোগে মালির তিন নাগরিকের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া গত ২০ জুলাই ওয়েবসাইটটিতে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কিরগিজস্তানের ১২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞার একটি বিজ্ঞপ্তিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

পাশাপাশি সম্প্রতি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ভিসা নীতি ঘোষণা করা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনের ভ্যারিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরেও আলোচিত চার ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

তবে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে গত ২০২৪ জুলাই আরোপিত দুইটি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক কোন দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে অ্যান্থনি ব্লিনকেন সে বিষয় নিয়ে টুইট প্রকাশ করে থাকেন।

Image Collage: Rumor Scanner 

এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের টুইটার অ্যাকাউন্ট ঘুরে দেখা যায়, তিনিও  মালির তিন নাগরিকের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েও টুইট করেছেন। 

Screenshot: Matthew Millar Twitter

পাশাপাশি সাম্প্রতিক কম্বোডিয়ার নির্বাচনকে ঘিরে দেশটিতে গণতন্ত্রের মর্যাদা নষ্ট করার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে গত ২৩ জুলাই একটি টুইট করেন ম্যাথিউ মিলার। 

Screenshot: Matthew Millar Twitter

এর বাইরে তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশের কারো উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে গত ২৪ জুলাই ম্যাথিউ মিলার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রকাশ করে না। তবে নিষেধাজ্ঞায় পড়া অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে। 

Screenshot: state.gov, USA

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, তাদের মধ্যে অফিসিয়াল বা সরকারি ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো নাম প্রকাশ করে না সেহেতু দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সরকারি অফিসিয়াল হওয়ায় তাদের ভিসা বাতিল হলে দেশটি নাম প্রকাশ করতো অথবা যদি নাম প্রকাশ নাও করে তাহলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ছাড়া অন্য কারো পক্ষে তাদের ভিসা বাতিলের বিষয়টি জানা সম্ভব নয়। অর্থাৎ তাদের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিটি কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। 

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেশীয় একাধিক গণমাধ্যমে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কানাডার ভিসা না পাওয়ার একটি তথ্য প্রচার করা হয়। গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানাডায় অনুষ্ঠিত একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে ভিসার আবেদন করেছিলেন ঢাবি উপাচার্য। কিন্তু আবেদনের এক মাস পরেও তিনি দেশটির ভিসা পাননি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন 

 ভিসা না পাওয়ায় কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি ঢাবি উপাচার্য  

কানাডার ভিসা পেলেন না ঢাবি উপাচার্য

তবে ভিসা না পাওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ভিসার জন্য আবেদন করেছি। বাকিটা কানাডিয়ান হাইকমিশনের বিষয়। এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওয়েবসাইটে নোটিফিকেশন বলা আছে, তিন মাস সময় লাগতে পারে। যেহেতু মাত্র এক মাস হয়েছে এখনই কাউকে দোষারোপ করতে পারছি না।’

Screenshot: Jugantor

মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার ভিসা নীতি ঘোষণার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মার্কিন  ভিসা বাতিলের একাধিক ভিত্তিহীন দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুইজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের আমেরিকার ভিসা বাতিলের একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে পূর্বের দাবিগুলোর মতোই উক্ত দাবিটিও গুজব বলে প্রতীয়মান হয়।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।

এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন 

সিইসি নুরুল হুদার মার্কিন ভিসা বাতিলের তথ্যটি গুজব 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মার্কিন ভিসা বাতিলের দাবিটি মিথ্যা 

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিটি গুজব

সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বাতিলের গুজব

সুতরাং, দুই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের আমেরিকার ভিসা বাতিলের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img