ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ালেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় দুই লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি শেখ হাসিনার পাশে ট্রাম্পের দাঁড়ানোর কোনো ঘটনার নয় এবং ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি, বরং এতে বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে৷ তাছাড়া, ভিডিওটি প্রায় ৫ বছর পুরোনো।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে ট্রাম্পের ২৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সংযুক্ত করে প্রচার করতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে এক ব্যক্তি নিজেকে বাংলাদেশে আশ্রয়রত রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ট্রাম্পকে জানান, বেশিরভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাড়ি ফিরতে চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছেন। জবাবে ট্রাম্প রোহিঙ্গাদের অবস্থান জিজ্ঞেস করেন৷ উক্ত ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের ইউটিউব চ্যানেলে প্রায় ৫ বছর পূর্বে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই তারিখে প্রকাশিত ২৭ সেকেন্ডের মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়।
ভিডিওটির শিরোনাম ও বর্ণনা পড়ে জানা যায়, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরা নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে প্রেসিডেন্ট প্রতুত্তরে রোহিঙ্গারা কোথায় তা জিজ্ঞেস করেন। উক্ত ভিডিওটিতেও শেখ হাসিনার বিষয়ে কোনো তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিডিওটি ২০১৯ সালের। অর্থাৎ শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর প্রায় ৫ বছর পূর্বের।
পাশাপাশি, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প ও শেখ হাসিনার বিষয়ে অনুসন্ধানে শেখ হাসিনাকে ট্রাম্পের প্রকাশ্যে সমর্থনের বিষয়ে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া না গেলেও সুইডেন-ভিত্তিক বাংলাদেশ বিষয়ক অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশকারী মাধ্যম নেত্র নিউজসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ওয়াশিংটন ডিসির একটি বিশিষ্ট লবিং প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারে প্রভাব তৈরিতে কাজ করবে। লবিং প্রতিষ্ঠানটিতে Christian Bourge ও Robert Stryk নেতৃত্ব প্রদান করেন যাদের সাথে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার করে শেখ হাসিনার পাশে ট্রাম্প দাঁড়িয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- The Telegraph – Donald Trump asks where Rohingya is
- Netra News – Joy hires Washington lobbyist tied to Trump
- RTV – Sajeeb Wazed Joy Hires U.S. Lobbyist for $200,000
- Rumor Scanner’s own analysis