সম্প্রতি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের করা পৃথক পৃথক দুটি মন্তব্য দাবিতে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজ এবং একাত্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত দুটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ডিবিসি নিউজের লোগো সংবলিত ফটোকার্ডে শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ‘জামায়াত শিবিরের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না সরকার’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করা হয়। এমন দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
অপরদিকে একাত্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হয় প্রেস সচিব শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ‘জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম ভালো লাগে না: শফিকুল আলম’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন। একান্তর টেলিভিশনের লোগো সংবলিত ফটোকার্ডটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে আলোচিত মন্তব্যগুলো করেননি। এছাড়াও ডিবিসি নিউজ কিংবা একাত্তর টেলিভিশন আলোচিত মন্তব্য সংবলিত কোনো ফটোকার্ডও প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, গণমাধ্যম দুটিতে প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যম আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ডিবিসি নিউজের ফটোকার্ড যাচাই
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে ‘ডিবিসি নিউজ’ এর লোগো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘৫ই অক্টোবর, ২৫’ উল্লেখ রয়েছে।
উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, ডিবিসি নিউজের ফেসবুক পেজে গত ০৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে ডিবিসি নিউজের লোগো এবং শফিকুল আলমের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘আওয়ামী লীগের ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না সরকার’ শিরোনামে ডিবিসি নিউজের উক্ত ফটোকার্ডটির ‘আওয়ামী লীগের’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘জামায়াত শিবিরের’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও একই মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে গণমাধ্যম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
একাত্তর টিভির ফটোকার্ড যাচাই
উক্ত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে একাত্তর টিভির লোগো রয়েছে এবং এটি প্রকাশের তারিখ ‘৩ অক্টোবর ২০২৫’ উল্লেখ করা হয়েছে।
উক্ত তথ্যাবলীর সূত্র ধরে একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে উক্ত তারিখে আলোচিত শিরোনাম সংবলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, একাত্তর টিভির ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজে গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় যেটির সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির আংশিক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির সাথে প্রচারিত ফটোকার্ডে একাত্তর টিভির লোগো এবং শফিকুল আলমের ছবির মিল রয়েছে, তবে উভয়ের শিরোনামে ভিন্নতা রয়েছে। মূলত, ‘বিদেশ ভ্রমণ ভালো লাগে না: শফিকুল আলম’ শিরোনামে একাত্তর টিভির উক্ত ফটোকার্ডটির ‘বিদেশ ভ্রমণ’ এর স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ‘জামায়াত শিবিরের কার্যক্রম’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও শফিকুল আলম জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে এমন কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে অনুসন্ধান করা হলে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, ডিবিসি নিউজ ও একাত্তর টেলিভিশনের দুটি ফটোকার্ড সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
সম্পাদিত ফটোকার্ডগুলো Bangladesh Fan Club নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করা হয়। পেজটি ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘শেখ ফজলে শামস পরশ ফ্যান ক্লাব’ নামে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে পেজটির নাম Sheikh Parash Fan Club- এ পরিবর্তন করা হলেও ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট পেজটির নাম Bangladesh Fan Club করা হয়।

উক্ত পেজটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পেজটিতে সাধারণত বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে প্রচার করা হয়ে থাকে। এর আগেও উক্ত পেজটি থেকে সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার করা হলে সেসময় সম্পাদিত ফটোকার্ডগুলো যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মন্তব্য দাবিতে গণমাধ্যমের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো সম্পাদিত।