সম্প্রতি “মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে এবং এ বছর আর সম্ভাবনা নেই ভারী বৃষ্টিপাতের” দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

যা দাবি করা হচ্ছে
গত ১৭ অক্টোবর ফেসবুকে ‘বিজ্ঞানপ্রিয় – Bigyanpriyo’ নামক পেজে “বিদায় মৌসুমি বায়ু” প্রকাশিত একটি পোস্টে (আর্কাইভ) দাবি করা হয়, “এরই মধ্য দিয়ে ১৬ অক্টোবর সকালে এই বছরের মতো বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে মৌসুমি বায়ু। এ বছর আর সম্ভাবনা নেই ভারী বৃষ্টিপাতের।”
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
গণমাধ্যমে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে দাবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন নয়া দিগন্ত– ১৬ অক্টোবর (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেওয়া এবং এ বছর আর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকার দাবি সঠিক নয় বরং মৌসুমি বায়ু ১৮ অক্টোবর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত শুধু দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নেওয়ার খবর ছিল এবং মৌসুমি বায়ু ছাড়া অন্য কারণেও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়ে গত ১৮ অক্টোবর সকালে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। পূর্বাভাসে বলা হয়, “দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হতে বিদায় নিয়েছে। দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশ থেকে বিদায় নেওয়ার আবহাওয়াগত অবস্থা অনুকূলে রয়েছে৷ মৌসুমি বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।”

অর্থাৎ, ১৮ অক্টোবর দুপুর ১২ টা পর্যন্ত মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। শুধু উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনিও মৌসুমি বায়ুর বিষয়ে একই তথ্য দিয়ে রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “মৌসুমি বায়ু এখন পর্যন্ত (১৮ অক্টোবর সকাল ৯ টা) পুরোপুরি বিদায় নেয়নি৷ শুধু উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে। আজকালের মধ্যে বাকি অংশ থেকেও বিদায় নিতে পারে।”
এ বছর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই?
কোনো স্থানে ২৪ ঘন্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলে তাকে ভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়। মৌসুমি বায়ু ছাড়াও বিভিন্ন কারণেই বছরের যে কোনো সময়ই ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে। গত সেপ্টেম্বরে লঘুচাপের প্রভাবে দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার খবর এসেছিল গণমাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল মান্নানও একই মত দিয়েছেন। তিনি রিউমর স্ক্যানারকে বলেছেন, “মৌসুমি বায়ু থাকলে সাধারণত নরমাল বৃষ্টিপাত হয়, তখন ভারী বর্ষনও হয়। এখন এটা বিদায় নিলেই যে আর ভারী বর্ষণ হবে না সেটা বলা যাবে না। সাগরে লঘুচাপ, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে কোনো সময়ই ভারী বর্ষণ হতে পারে।”
মূলত, চলতি বছরের জুনে দেশে আসা মৌসুমি বায়ু সম্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিলেও এখনও দেশের বাকি অংশে রয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যম ও ফেসবুকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে দাবিতে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া মৌসুমি বায়ু বিদায় নিলে এ বছর আর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকার দাবিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল মান্নান রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, “এখন এটা বিদায় নিলেই যে আর ভারী বর্ষণ হবে না সেটা বলা যাবে না। সাগরে লঘুচাপ, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে কোনো সময়ই ভারী বর্ষণ হতে পারে।” অর্থাৎ, এ বছর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকার দাবিটিও বিভ্রান্তিকর।
উল্লেখ্য, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যে বায়ুর দিক পরিবর্তন হয় তাকেই সাধারণত মৌসুমি বায়ু বলা হয়। বর্তমানে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু চলতি বছরের জুনে দেশে এসেছিল।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অক্টোবরে একটি থেকে দুটি লঘুচাপ হতে পারে, যার একটি রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার প্রভাবে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সুতরাং, এ বছর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকার দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- BMD: Weather Forecast 18 October
- Statement from Dr. Md. Abdul Mannan, Meteorologist, Bangladesh Meteorological Department