সম্প্রতি, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতা Tarique Rahman হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিকে চটি বই হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছেন যে সেগুলো কোনো নৈতিক শিক্ষা দেয় না।” শীর্ষক একটি সংবাদ ভারতীয় বেশকিছু গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ পোর্টাল Opindia, India Today, Times Now, Reportwire, Asianet Suvarna news, Janpeace live সহ আরো বেশকিছু সংবাদ মাধ্যম। কেউ কেউ তাদের প্রতিবেদনে বক্তব্যটিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছে কিংবা তার ছবি ব্যবহার করেছে, আবার কেউ বিরোধী দলীয় নেতা Tarique Rahman হিসেবে লিখেছে।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান Tarique Rahman হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থগুলিকে চটি বই উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দেননি বরং ২০২১ সালে প্রায় অনুরুপ একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব Md Tarek Rahman.
অনুসন্ধানে Dhaka Television নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ তারেক রহমানের লাইভের উক্ত অংশের ভিডিও ফুটেজটি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওর ক্যাপশনে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব Md Tarek Rahman কে ছাত্রদল নেতা হিসেবে ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত ভিডিও ফুটেজে গণঅধিকার পরিষদের Md Tarek Rahman কে বলতে শোনা যায়, “বিশ্বে কোনো দেশ যদি থাকে, এইটা হলো চিটিংবাজ ভারত, যাদের নিজেদের কোনো আদর্শ নাই, নিজেদের কোনো নৈতিকতা নাই, নিজেদের কোনো ইথিক্যাল পয়েন্ট নাই, এদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে বিভিন্ন যে ধর্মগ্রন্থগুলো রয়েছে এগুলোতে এ ওর সংঙ্গে লাগায়, ও ওর সঙ্গে লাগায়, এগুলো দিয়ে ধর্মগ্রন্থ ভরা। ধর্মগ্রন্থ নয় যেন চটিগ্রন্থ এগুলা। তো তারা আমাদের ওপর আগ্রাসন চালায়, সংস্কৃতিক আগ্রাসন,রাজনৈতিক আগ্রাসন..।”
অর্থাৎ, ২০২১ সালের মার্চে নিজের ফেসবুক পেজে করা একটি লাইভে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব Md Tarek Rahman নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের নাম উল্লেখ না করে ভারতের ইতিহাস, ঐতিহ্যে যে ধর্মগ্রন্থগুলি রয়েছে সেগুলিকে চটি গ্রন্থ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
বিতর্কিত সেই লাইভ ভিডিওটি গণ অধিকার পরিষদের মোঃ তারেক রহমান সেসময় সরিয়ে ফেলায় অনুসন্ধানে তাই ২০২১ সালের মার্চের মোদি বিরোধী আন্দোলনের সময়ের সেই লাইভটি তার পেজে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে উক্ত লাইভ ভিডিওর টিশার্টের অনুরূপ টিশার্ট পরিহিত অবস্থায় তাকে ২০২১ সালের ১১ মার্চ একটি ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে।

গণ অধিকার পরিষদের মোঃ তারেক রহমানের এই লাইভটিতে দেয়া বক্তব্য নিয়ে সেসময় প্রতিবাদ হতে দেখা যায়। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,
“নূর ও তার সহযোগীদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বেরিয়ে যাওয়া সংগঠনের অপর অংশ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক এপিএম সুহেল ও সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাট এক প্রতিবাদ লিপিতে বলেছেন, তারেক রহমানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা স্পষ্টতই ধর্মীয় অবমাননা ও বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি বিনষ্টের একটি অপচেষ্টা বলে আমরা মনে করি। ভিডিও বার্তায় তিনি যা বলেছেন তা খুবই নোংরা এবং অশ্লীল কথাবার্তায় পরিপূর্ণ। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোকে ‘চটিগ্রন্থ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি এবং সেগুলোর কাহিনীকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সুহেল ও সম্রাট প্রতিবাদ লিপিতে আরো বলেছেন, পাশ্ববর্তী দেশ ‘ভারতের ধর্মগ্রন্থ’ বলতে সেখানে বসবাসরত সব জাতির সব ধমগ্রন্থকেই বোঝায়। ভারতে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মানুভুতির মানুষজনই বসবাস করেন না। সেখানে মুসলমান, খ্রীষ্টান,বৌদ্ধসহ অন্যান্য অনেক ধর্মের মানুষের বসবাস। তার এই বক্তব্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেতনার পরিপন্থী।”

একই তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠ তে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, ২০২১ সালের মার্চে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ তারেক রহমান এর দেয়া বিতর্কিত একটি বক্তব্যকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার করছে। পুরনো এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার করতে গিয়ে কেউ কেউ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (তারেক জিয়া) এর ছবি ও নাম ব্যবহার করেছে, কেউ আবার তার ছবি ব্যবহারের পাশাপাশি বক্তব্যটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য হিসেবেই উল্লেখ করেছে। আবার কেউ কেউ বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেতা Tarique Rahman উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে বিএনপির তারেক রহমানকে বুঝিয়েছে। কেউ কেউ সংবাদে ঠিকভাবে উল্লেখ করলেও, পুরনো বিষয়কে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচার করেছে, যা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

মূলত, আলোচিত বক্তব্যটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান Tarique Rahman এর নয় বরং প্রায় অনুরুপ কাছাকাছি বক্তব্যটি দিয়েছিলেন ২০২১ সালে নবীন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব Md Tarek Rahman (মোঃ তারেক রহমান)। গণঅধিকার পরিষদের মোঃ তারেক রহমান তার বক্তব্যে অবশ্য সরাসরি হিন্দু ধর্ম উল্লেখ না করে, ভারতের ধর্মগ্রন্থগুলি উল্লেখ করেছে।
অনেকেই গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ তারেক রহমান এর এই বক্তব্যের সাথে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের ছবিও প্রচার করছে।

এছাড়াও, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর নামের বানান হলো Tarique Rahman, অপরদিকে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ তারেক রহমান এর নামের বানান হলো Md Tarek Rahman। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে নামের বানানে Tarique Rahman ব্যবহার করেছে, যা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত করে।

অর্থাৎ, ২০২১ সালের মার্চ মাসে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মোঃ তারেক রহমানের এই বক্তব্যটিকে সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচার করার বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে রিউমর স্ক্যানার এবং উক্ত বক্তব্যটিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর বক্তব্য দাবির বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সুতরাং, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিকে চটি বই হিসেবে উল্লেখ করেছেন দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Television on Facebook (Old Speech video of Md Tarek Rahman) – https://www.facebook.com/DhakaTelevision1971/videos/434847390911756
- Md Tarek Rahman on Facebook – https://fb.watch/i1lD5rVDyX/
- Bhorer Kagoj – নূরের সংগঠনের নেতার সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে প্রতিবাদ একাংশের
- Daily Janakantha – নূরের সংগঠনের উগ্র সাম্প্রদায়িক তৎপরতা
- Facebook Page of Tarique Rahman – https://www.facebook.com/tariquerahman.bdbnp
- Facebook Page of Md Tarek Rahman – https://www.facebook.com/profile.php?id=100050306567294