নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের এক অধ্যায়ে একাধিক ভুল

দেশে চলতি বছর থেকে নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নতুন কারিকুলামের ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’ বইয়ের একাধিক ভুল নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে সমালোচনা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

যেসব ভুল নিয়ে আলোচনা

নবম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’  বইয়ের ‘জৈব অণু’ (৯ম অধ্যায়) নামে একটি অধ্যায় রয়েছে। এই অধ্যায়ের ১৩৭ নং পৃষ্ঠায় ‘কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা’ শিরোনামের পাঠের ৯.৩ নং চিত্রে গ্লুকোজের দুইটি চিত্রের প্রথমটিতে কার্বন ৬ টি, হাইড্রোজেন ১০ টি ও অক্সিজেন ৫ টি দেখানো হয়েছে।

এছাড়া, একই অধ্যায়ের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় ‘ডিএনএ’ শিরোনামের পাঠের ৯.৫ নং চিত্রে ডিএনএর নাইট্রোজেন বেসের গঠনের একটি ছবি রয়েছে যাতে গুয়ানিন এবং থাইমিনের গঠনে একটি করে হাত খালি দেখা যাচ্ছে।

তাছাড়া, একই পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়েছে, ডিএনএর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারের জন্য ওয়াটসন ও ক্রিক ১৯৬৩ সালের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। 

বইয়ে

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নবম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’ বইয়ের ‘জৈব অণু’ নামের অধ্যায়ে গ্লুকোজ, গুয়ানিন ও থাইমিনের যে চিত্র রয়েছে তা সঠিক নয় এবং ডিএনএ নিয়ে পাওয়া নোবেল পুরষ্কারের বিষয়ে ভুল তথ্য রয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে, গ্লুকোজের চিত্রে ১০টি হাইড্রোজেন ও ৫টি অক্সিজেন এবং গুয়ানিনে একটি নাইট্রোজেন এবং থাইমিনে H2C বসবে। তাছাড়া, ১৯৬৩ সালে নয়, ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারের জন্য ১৯৬২ সালে নোবেল পুরষ্কার পান জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিনস। 

পাঠ্যবইয়ে থাকা গ্লুকোজের গঠনের বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের এডুটেক সংস্থা বাইজুসের ওয়েবসাইটে গ্লুকোজের একই গঠনের চিত্রের সন্ধান মিলেছে। 

সাধারণত গ্লুকোজের গঠনে ৬টি কার্বন, ১২টি হাইড্রোজেন ও ৬টি অক্সিজেন থাকে। বাইজুসে পাওয়া গ্লুকোজের গঠনে এমনটাই উল্লেখ রয়েছে। তবে পাঠ্যবইয়ের একই গঠনে ৬টি কার্বন ঠিক থাকলেও ১০টি হাইড্রোজেন ও ৫টি অক্সিজেন রয়েছে। 

Screenshot collage: Rumor Scanner

বইটির ১৪০ নং পৃষ্ঠায় নাইট্রোজেন বেসের গঠনের যে ছবি রয়েছে এতেও অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বাইজুসের ওয়েবসাইটেই একই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে যার সাথে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, পাঠ্যবইয়ের চিত্রে গুয়ানিনের ফাঁকা থাকা হাতে একটি নাইট্রোজেন রয়েছে। এর ফলে গুয়ানিনের সংকেত (, ) দাঁড়াচ্ছে, C5H5N5O। 

অন্যদিকে, পাঠ্যবইয়ে থাইমিনের গঠনে একটি হাত খালি রয়েছে যাতে মূলত H2C হওয়ার কথা (, )। এর ফলে থাইমিনের সংকেত হবে, C5H6N2O2। 

Screenshot collage: Rumor Scanner 

নোবেল সংক্রান্ত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে নোবেল প্রাইজের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৬২ সালে ডিএনএ এর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় নোবেল পুরষ্কার পান জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিনস। অথচ, পাঠ্যবইয়ে সালটি এক বছর বাড়িয়ে লেখা হয়েছে এবং মরিস উইলকিনসের নামও উল্লেখ করা হয়নি। 

মূলত, চলতি বছর থেকে নবম শ্রেণিতে চালু হওয়া নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’ বইয়ের ‘জৈব অণু’ নামে একটি অধ্যায়ে একাধিক তথ্য ও ছবি সম্পর্কিত ভুলের প্রমাণ মিলেছে। অধ্যায়টির ১৩৭ নং পৃষ্ঠায় ‘কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা’ শিরোনামের পাঠের ৯.৩ নং চিত্রে গ্লুকোজের দুইটি চিত্রের প্রথমটিতে ছয়টি কার্বনের পাশাপাশি হাইড্রোজেন ১০ টি ও অক্সিজেন ৫ টি দেখানো হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে ১০টি হাইড্রোজেন ও ৫টি অক্সিজেন হবে। এছাড়া, একই অধ্যায়ের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় ‘ডিএনএ’ শিরোনামের পাঠের ৯.৫ নং চিত্রে ডিএনএর নাইট্রোজেন বেসের গঠনের একটি ছবি রয়েছে যাতে গুয়ানিন এবং থাইমিনের গঠনে একটি করে হাত খালি দেখা যাচ্ছে। এতে গুয়ানিনে একটি নাইট্রোজেন এবং থাইমিনে H2C বসবে৷ তাছাড়া, একই পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় দাবি করা হয়েছে, ডিএনএর রাসায়নিক গঠন আবিষ্কারের জন্য ওয়াটসন ও ক্রিক ১৯৬৩ সালের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যা মূলত ১৯৬২ সাল এবং একই বিষয়ে নোবেল পাওয়া তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে মরিস উইলকিনসের নামও বাদ পড়েছে।

উল্লেখ্য, পূর্বে একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে প্রাচীন জেরিকো নগরীর আলোচনায় ভুল মানচিত্র প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। দেখুন এখানে। 

সুতরাং, নবম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ)’ বইয়ের ‘জৈব অণু’ নামের অধ্যায়ে উল্লিখিত এই আলোচিত তথ্যগুলো বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img