সম্প্রতি, ‘সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের শাস্তির ভিডিও’ দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হয়, ১৬ মাসের কন্যা সন্তানকে রেখে মা ঘুরতে যাওয়ায় শিশুটি মারা যায় এবং এর কারনেই মাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ভারতে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি সন্তানের মৃত্যুতে মাকে শাস্তি প্রদানের কোনো ভিডিও নয় বরং ২০১৮ সালের ভিন্ন নারীর ভিডিওর সাথে সাম্প্রতিক সময়ে সন্তানকে একা ফেলে মায়ের ১০ দিনের ভ্রমণের ঘটনায় এক নারীর আদালত কর্তৃক শাস্তি ঘোষণার ঘটনাকে জড়িয়ে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে, ২০১৯ সালের পহেলা আগস্ট একই ভিডিও (আর্কাইভ) Hannah Critchfield নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ করা হয়।
ভিডিওর বিস্তারিত অংশে একটি নিউজের লিংক দেওয়া রয়েছে। এটির সূত্র ধরে ফিনিক্স নিউ টাইমস নামে মার্কিন একটি সংবাদমাধ্যমে I’m Gonna Die in Here’: 19-Year-Old Mentally Ill Woman Remains in Jail for Spitting শিরোনামের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খোঁজ মেলে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া, অটিজম এবং গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত একজন তরুণী, তার মানসিক স্বাস্থ্য সংকট থেকে উদ্ভূত ঘটনার কারণে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ফাঁদে পড়েছেন। ভ্যালেন্টিনার এই ঘটনা অ্যারিজোনার কারাগারে মানসিক ভারসাম্যহীনদের চিকিৎসার দুরবস্থা তুলে ধরে।
তবে, ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়ার মায়ের ইন্টারভিউসহ The Real News Network নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে আরেকটি ভিডিও (আর্কাইভ) প্রকাশ করা হয়। সেখানে তার মা ভুল চিকিৎসা ও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।
প্রকাশ হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, গ্লোরিয়ার মেন্টাল হেলথ সেশনটি ছিলো ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। এরপর, মেন্টাল হেলথ সেশন চলাকালে অফিসারদের থুথু মারার দায়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পুরুষদের জেলে থাকেন তিনি। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেয়া হয়। থুথু মারার সেই ভিডিও ব্যবহার করেই আলোচিত দাবিটি অর্থাৎ ১৬ মাসের কন্যাকে একা রেখে ১০ দিনের অবকাশে যাওয়া মাকে সাজা দেওয়ার দাবিতে বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর এ সংক্রান্ত ভিডিওগুলোর ক্যাপশনে উল্লিখিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে রিউমর স্ক্যানার। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর ওয়েবসাইটে গত ১৯ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের নাগরিক ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিও তার ১৬ মাস বয়সী কন্যা জাইলেনকে একা ঘরে রেখে ১০ দিনের অবকাশে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের জুনের এই ঘটনায় অবকাশ কাটিয়ে ১৬ জুন বাড়ি ফিরে সন্তানকে অচেতন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে ফোন দেন ক্রিস্টেল। সিএনএন বলছে, সংশ্লিষ্ট ফোর্সগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বেই ক্রিস্টেল তাঁর মেয়ের পোশাক পরিবর্তন করেন এবং দাবি করেন মাত্রই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেন ক্রিস্টেল। সাজা হিসেবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের শাস্তির ভিডিও’ দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হচ্ছে, শিশু সন্তানকে রেখে ঘুরতে যাওয়ার ফলে শিশুটি মারা যাওয়ায় মাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে দেখেছে, প্রচারিত ভিডিওটি মূলত আমেরিকান ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত এক কিশোরীর ২০১৮ সালের মেন্টাল হেলথ সেশনের ভিডিও যা ২০১৯ সালে প্রকাশ্যে আসে। অন্যদিকে, এই ভিডিও ব্যবহার করে যে ক্যাপশন কেন্দ্রিক দাবি প্রচার হচ্ছে তার সাথেও এই ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই। ক্যাপশনের ঘটনাটি মূলত গত বছরের। ঘটনার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেন ক্রিস্টেল নামে উক্ত নারী। সাজা হিসেবে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সুতরাং, সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের শাস্তি ঘোষণার গত ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনার সাথে আমেরিকার মানসিক রোগে আক্রান্ত কিশোরীর মেন্টাল হেলথ সেশনের ২০১৮ সালের ভিডিও যুক্ত করে দুটোই একই ঘটনার বলে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Hannah Critchfield – YouTube Video
- CNN – An Ohio toddler died after her mom left her home alone while she took a 10-day vacation. A judge called it the ‘ultimate act of betrayal’
- Phoenix New Time – ‘I’m Gonna Die in Here’: 19-Year-Old Mentally Ill Woman Remains in Jail for Spitting
- The Real News Network – YouTube Video
- Rumor Scanner’s Own Research