সম্প্রতি, ‘টুইটারে নীল টিকের অ্যাকাউন্ট ছাড়া দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল’ এবং ‘টুইটারে থাকছে না টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ শীর্ষক দুইটি দাবি গণমাধমে প্রচারিত হচ্ছে।
নীল টিকের (ভেরিফাইড) অ্যাকাউন্ট ছাড়া দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল দাবিতে প্রথম আলো এবং বাংলা ভিশন সংবাদ প্রচার করেছে।
টুইটারে দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল দাবিতে দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদ প্রচার করেছে।
ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট ছাড়া দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমার স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘টুইটারে নীল টিকের অ্যাকাউন্ট ছাড়া দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল’ এবং ‘টুইটারে থাকছে না টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রচারিত দাবিগুলো সত্য নয় বরং টুইটারের অর্থিক ফিভিত্তিক সেবা ‘টুইটার ব্লু’ এর সাবক্রাইব করা ব্যবহাকারী ব্যতীত ফ্রি ব্যবহারকারীদের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে দুই স্তর অথেনটিকেশন কোড পাওয়া বন্ধ হয়েছে। তবে, ফ্রি ব্যবহারকারীরা এখনো অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী এর মাধ্যমে দুই স্তর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে পারবে।
দুই স্তর অথেনটিকেশনস কি?
দুই স্তর অথেনটিকেশন (Two Factor Authentication) অথবা 2FA হলো একটি নিরাপত্তা ফিচার। এই ফিচার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টের অধিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ব্যবহার করে থাকে। এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের মালিকই অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করছে তা নিশ্চিত করা হয়। সাধারণত পাসওয়ার্ড দিয়েই যেকোনো অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করা যায়। তবে দুই স্তর লগ-ইন ফিচারটি চালু করলে ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরেও আরো এক ধাপে নিজেদের পরিচয় যাচাই করে অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করতে হয়। দুই স্তর অথেনটিকেশনের কোড পাওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে থাকে। যার মাধ্য অন্যতম হলো লগ-ইনের সময় মোবাইল ফোনের এসএমএসের আসা কোড দিয়ে লগিন। জনপ্রিয় এই নিরাপত্তা ফিচার প্রায় সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ব্যবহার করা হয়।
টুইটারে দুই স্তর লগ-ইন সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট টুইটারে ব্লগ সাইটে গত ১৫ মার্চ “An update on two-factor authentication using SMS on Twitter” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, টুইটার এতদিন যাবৎ দুই স্তরের লগ-ইনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের তিন ধরণের পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিলো। যা হলো- মোবাইলে প্রাপ্ত এসএমএস,অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী। তবে, এসএমএসের মাধ্যমে এই ফিচার অপব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে টুইটার জানিয়েছে, এসএমএসের মাধ্যমে দুই স্তরের লগ-ইনের সুযোগ এখন শুধুমাত্র টুইটার ব্লুতে সাবস্ক্রাইব করা ব্যবহারকারীরাই পাবে। টুইটার ব্লু কেনা নেই এমন ব্যবহারকারীরা অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী এর মাধ্যমে নিজেদের অ্যাকাউন্টে দুই স্তরের নিরাপত্তা ফিচার ব্যবহার করতে পারবে।
অর্থাৎ, দুই স্তরের লগ-ইন এখনো সচল আছে তবে যারা টুইটার ব্লু কিনেনি তারা এসএমএসের মাধ্যমে এই ফিচার ব্যবহার করতে পারবে না। তবে অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী ব্যবহার করে এখনো তারা এই ফিচার ব্যবহার করতে পারবে।
অথেনটিকেটর অ্যাপ কি?
দুই স্তর অথেনটিকেশন ব্যবহার করলে লগ-ইনের ক্ষেত্রে এসএমএসের মাধ্যমে কোড পাওয়ার বিকল্প হিসেবে অথেনটিকেটর অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। অথেনটিকেটর অ্যাপের মাধ্যমেও দুই স্তরে লগ-ইনের কোড পাওয়া যায়। জনপ্রিয় একটি অথেনটিকেটর অ্যাপ হলো গুগল অথেনটিকেটর।
টুইটার ব্লু কি?
টুইটার ব্লু হলো টুইটারের আর্থিক ফি ভিত্তিক গ্রাহকসেবা। ডিভাইস ভেদে ৮ থেকে ১১ ডলারের বিনিময়ে এই সেবা নেওয়া যাবে। এই সেবা নেওয়া গ্রাহকরা নামের পাশে নিল চিহ্ন, টুইট এডিট, থ্রেড রিডার ও বুকমার্ক ফোল্ডারের মতো কয়েকটি বারতি সুবিধা পাবে।
মূলত, টুইটারে দুই স্তর অথেনটিকেশনের ক্ষেত্রে এসএমএস,অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী ব্যবহার করা হয়। তবে সম্প্রতি টুইটার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধন্ত নিয়েছে যারা তাদের আর্থিক ফি ভিত্তিক সেবা ‘টুইটার ব্লু’ নিয়েছে তারাই শুধুমাত্র এসএমএসের মাধ্যমে দুই স্তর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে পারবে। ফ্রি ব্যবহারকারীরা এই পদ্ধতি বাদে অথেনটিকেটর অ্যাপ এবং সিকিউরিটি কী এর মাধ্যমে এখনো এই সেবা নিতে পারবে। তবে, উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘টুইটারে নীল টিকের অ্যাকাউন্ট ছাড়া দুই স্তরের লগ-ইন বাতিল’ এবং ‘টুইটারে থাকছে না টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ শীর্ষক দুইটি দাবি দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, টুইটারে দুই স্তরের অথেনটিকেশন সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলো বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Twitter – Twitter Blue is back. And gold checkmarks are here!
- Twitter- Twitter Blue is back. And gold checkmarks are here!
- Rumor Scanner’s analysis.