ভিডিওতে দৃশ্যমান মারধরের শিকার ব্যক্তিটি শ্রীলঙ্কার তথ্যমন্ত্রী নন

সম্প্রতি, “শ্রীলংকান তথ্যমন্ত্রী, যিনি কথায় কথায় স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী যাতে সুযোগ নিতে না পারে বলে টিভিতে ভাষন দিতেন আজ তারে ল্যাংটা করে দৌড়ায়ে দৌড়ায়ে মারলো জনতা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

মারধর

ফেসবুকে প্রচারিত এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে এবং ইউটিউব প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওতে দৃশ্যমান মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তিটি শ্রীলঙ্কা সরকারের বর্তমান কিংবা সাবেক কোনো তথ্যমন্ত্রী নন বরং ঐ ব্যক্তি দেশটির সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা, যার নাম মাহিন্দা কাহান্দাগামা।

আলোচিত ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কান মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘DailyMirror‘ এর টুইটার একাউন্ট হতে গত ০৯ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় কিছু দৃশ্যের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তথ্যমন্ত্রীকে মারধরের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে।

ডেইলি মিররের টুইটার একাউন্ট কর্তৃক প্রচারিত টুইট ক্যাপশনে বলা হয়েছে,

Mahinda Kahandagama, President of the Colombo Municipal Councilors ‘and Employees’ Union of the Sri Lanka People’s Front (SLPP) participated in a protest rally in front of the Temple Trees Gate this morning in support of President Mahinda Rajapaksa.

উক্ত লিখাটির বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টের (SLPP) কলম্বো মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলরস অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মাহিন্দা কাহান্দাগামা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থনে আজ সকালে টেম্পল ট্রিস গেটের সামনে একটি প্রতিবাদী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়াও, সিংহলি ভাষায় প্রকাশিত শ্রীলঙ্কান সংবাদমাধ্যম মাওবিমা ‘Mawbima.IK‘ এর ওয়েবসাইটে “අරගලකරුවන්ට ගහන්න ආ මහින්ද කහඳගමට ලැබුණු අනපේක්ෂිත දඬුවම ( গুগল কর্তৃক সয়ংক্রিয় অনুবাদ–Unexpected punishment meted out to Mahinda Kahandagama who came to attack the protesters)-বঙ্গানুবাদ- (প্রতিবাদকারীদের আক্রমণ করতে এসে মাহিন্দা কাহান্দাগামা অপ্রত্যাশিতভাবে হামলার স্বীকার হয়েছেন) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিওতে দৃশ্যমান মারধরের শিকার ব্যক্তির কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত ভিডিওর বেশ কিছু দৃশ্যের মিল রয়েছে।

Screenshot ‘Mawbima.IK

অর্থাৎ, ভিডিওতে দৃশ্যমান মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তিটির নাম মাহিন্দা কাহান্দাগামা। তিনি শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন দল শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট (এসএলপিপি) সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা। শ্রীলঙ্কায় চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আক্রমন করতে এসে উল্টো বিক্ষোভকারীদের দ্বারাই তিনি আহত হয়েছেন তিনি।

পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম ‘Newsfirst.lk‘ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একটি সভায় মাহিন্দা কাহান্দাগামার উপস্থিতি থাকার তথ্য ও ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot ‘Newsfirst.lk

এছাড়াও, শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম ‘hirunews.IK‘ এর ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে মাহিন্দা কাহান্দাগামাকে নিয়ে প্রকাশিত আরেকটি একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে তার পরিচয় হিসেবে ‘Chairman of Self employed Federation’ এর কথা উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, তাকে শ্রীলঙ্কার একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা বলা হয়েছে।

আলোচিত বিষয়টির অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার তথ্য ও গণমাধ্যম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ‘নালাকা গোদাহেবা’ এর নাম উল্লেখ রয়েছে। যিনি গত ১৮ এপ্রিল উক্ত পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে নিয়োগের পরই তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগের জন্য আবেদন করলে দেশটির রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।

এছাড়াও, এর আগে রাজাপক্ষ সরকারের তথ্য ও গণমাধ্যম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা। যিনি ২০২০ সালের ১২ আগস্ট নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

মূলত, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতা কর্তৃক দেশটির সরকার সমর্থিত একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা মাহিন্দা কাহান্দাগামা মারধরের শিকার হন। উক্ত ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওকে দেশটির তথ্যমন্ত্রীকে মারধরের দৃশ্য দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় চলমান ভয়াবহ অর্থনেতিক মন্দাকে কেন্দ্র করে চলমান সরকার বিরোধী গণ আন্দোলনের মুখে গত ০৯ মে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে৷ সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী এবং তার সমর্থিত বেশকয়েকজন মন্ত্রী ও এমপির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার(১২ মে) দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহ। যিনি শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) এর অন্যতম শীর্ষ নেতা।

প্রসঙ্গত, গতকাল ১২ মে শ্রীলঙ্কার সদ্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার ছেলে নামাল রাজাপাকসেসহ ১৫ জন ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির স্থানীয় একটি আদালত।

সুতরাং, ভিডিওতে দৃশ্যমান মারধরের শিকার ব্যক্তি ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষ সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষী হলেও তিনি সরকারের তথ্য কিংবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন না।

অর্থাৎ, শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে আন্দোলনকারীদের হাতে মারধরের শিকার এক শ্রমিক নেতাকে দেশটির তথ্যমন্ত্রী দাবিতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img