বুধবার, অক্টোবর 9, 2024

ভিডিওটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রেমিক কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকাকে হত্যার ঘটনার নয়

সম্প্রতি “হিন্দু মেয়েটিকে ভিন্ন ধর্মের ছেলে কেটে বিট্রিশে বড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় দরা পরেছে।(ভারত)” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রেমিক কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকাকে হত্যা সম্পর্কিত কোনো ঘটনার নয় বরং তারা উভয়ই একই ধর্মের। তবে ঠিক কিভাবে ঐ তরুণী মারা গিয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

ভিডিওটির কিছু স্থিরচিত্র রিভার্স সার্চের মাধ্যমে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “hindi.news18.com” এর অনলাইন সংস্করণে গত ২৬ মার্চে “कलियर हत्याकांड: सूटकेस में मिली लड़की की लाश, लड़के ने पहले कहानी गढ़ी फिर किया हत्या की वजह का खुलासा (অনুবাদ- কালিয়ার হত্যাকাণ্ড: স্যুটকেসে মেয়ের লাশ, ছেলে প্রথমে গল্প বানান তারপর খুনের কারণ জানাল)” শীর্ষক শিরোনামে  প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিও সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য  জানা যায়।

Screenshot from News18 website

পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম “jagran” এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ মার্চে “शादी से इन्कार करने पर युवती की हत्‍या, सूटकेस में शव डालकर होटल से हो रहा था फरार (অনুবাদ -বিয়ে করতে অস্বীকার করায় মেয়েটিকে খুন, দেহ স্যুটকেসে রেখে হোটেল থেকে পলাতক) ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ভিডিও সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Jagran website

পাশাপাশি, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম “etvbharat” এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ মার্চে “झूठी थी आत्महत्या की कहानी, प्रेमिका के ‘सूटकेस मर्डर’ के लिए बनाया था फुलप्रूफ प्लान(অনুবাদ – আত্মহত্যার গল্প মিথ্যে, বান্ধবীর ‘স্যুটকেস খুনের’ বানোয়াট পরিকল্পনা করা হয়েছিল)” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংযুক্ত একটি ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির কিছু অংশের মিল খুঁজে পাওয়া যায় ।

এছাড়াও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘aajtak’ এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ মার্চে “सूटकेस में प्रेमिका का शव ले जा रहा था प्रेमी, पुलिस ने पकड़ा तो जानिए क्या बोला” (অনুবাদ -স্যুটকেসে প্রেমিকার লাশ নিয়ে যাচ্ছিল প্রেমিক, পুলিশ ধরলে, কী বললেন জেনে নিন) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

হিন্দু
Screenshot from aajtak website

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উত্তরখান্ডের কালিয়ার একটি আবাসিক হোটেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক প্রেমিক যুগল একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। তারা দুইজন কক্ষে প্রবেশের প্রায় তিন ঘণ্টা পর প্রেমিক ছেলেটি হোটেল কক্ষ থেকে একটি স্যুটকেস নিয়ে বের হতে শুরু করে তবে ঐ যুবক স্যুটকেসটি ঠিকমতো বহন করতে না পারায় হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে হোটেল ম্যানেজার ঐ যুবককে থামিয়ে স্যুটকেস খুলে স্যুটকেসটিতে ঐ যুবকের সাথে হোটেল কক্ষে প্রবেশ করা মেয়েটির মৃতদেহ দেখতে পান। এরপর হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে এবং ছেলেটিকে তাদের হেফাজতে নেয়।

Also Read: ভিডিওটি কোনো হিন্দু মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের নয়

তবে উক্ত ঘটনায় ধারণকৃত ভিডিওকেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রেমিক কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকাকে হত্যার ঘটনার ভিডিও দাবি করে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আলোচিত ভিডিওর মেয়েটির মারা যাওয়া সম্পর্কে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘aajtak‘ এর ভাষ্যমতে,  “ছেলে ও মেয়ে দুজনের মধ্যে গত আট বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। তাদের পরিবার তাদের বিয়ের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলে তারা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা এর জন্যই হোটেল রুম ভাড়া করেছিলো। ছেলেটি দাবি করেছে যে তার প্রেমিকা তার আগে বিষ খেয়েছিল এবং সাথে সাথে মারা গেছে এবং তিনি প্রেমিকার মৃতদেহ নিকটবর্তী একটি নদীতে ফেলে নিজে ঝাঁপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”

অন্যদিকে ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম ‘jagran‘ এর দাবি,

“বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় প্রেমিকাকে খুন করেছে করেছেন প্রেমিক।”

তাছাড়া, উক্ত বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘etvbharat’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়,

“অভিযুক্ত ছেলেটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেয়ার সময় মেয়েটির কাজল নামের ভুয়া পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হয়েছিলো।”

উল্লেখ্য, ভারতেও উক্ত ভিডিওটি একই দাবিতে প্রচার হওয়ার পর ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজ বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অল্ট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কালিয়ার থানার পুলিশ কর্মকর্তা ধর্মেন্দ্র রথী জানিয়েছে যে দুইজন একই সম্প্রদায়ের এবং বহু বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ছিল। ঐ মেয়ের বাবার নির্দেশে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে এবং আসামিকেও গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওর ঘটনায় মেয়েটির মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এটি নিশ্চিত যে ছেলে-মেয়ে দুইজন দুই ধর্মের ছিলো না বরং তারা দুইজন একই ধর্মের এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

সুতরাং, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী প্রেমিক কর্তৃক হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রেমিকাকে হত্যার দৃশ্য দাবি করে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]

  • Claim Review: হিন্দু মেয়েটিকে ভিন্ন ধর্মের ছেলে কেটে বিট্রিশে বড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় দরা পরেছে।(ভারত)
  • Claimed By: Facebook Posts
  • Fact Check: Misleading

[/su_box]

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img