বিয়ে সহজ করতে আইনমন্ত্রী কর্তৃক আইন পরিবর্তনের ভুয়া তথ্য টিকটকে

দেনমোহর হলো মুসলিম বিবাহ বিধানের একটি প্রধান ও অপরিহার্য উপাদান। এটি বিবাহের সময় স্বামী কর্তৃক তার স্ত্রীকে দেওয়া এক ধরণের আর্থিক নিরাপত্তা। মুসলিম শরিয়া আইন অনুসারে, এটি স্ত্রীর আইনগত অধিকার এবং তাকে এই দেনমোহর দেওয়া স্বামীর দায়িত্ব।

সম্প্রতি, সাংবাদিকদের সাথে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কথা বলার একটি ছবি ব্যবহার করে “বিয়ে সহজ করতে নতুন আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন (আইনমন্ত্রী), দেনমোহর ২০ হাজার টাকা ধার্য করা হলো এবং বিয়ে করতে হলে ছেলের বয়স ১৮ আর মেয়ের বয়স ১৪ করা হলো” শীর্ষক একটি দাবি শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত হচ্ছে। 

আইনমন্ত্রী

টিকটক প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন  এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিয়ে সহজ করতে আইনমন্ত্রী কর্তৃক আইন পরিবর্তনের আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয় বরং তার পুরোনো ছবি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে এমন দাবি টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দাবিকৃত এমন কোনো সংবাদ দেশিয় কোনো মূলধারার গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারী somoynews.tv এর ফেসবুক পেজে ‘কথা বলছেন আনিসুল হক’ শিরোনামে একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়।

লাইভ ভিডিওটিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেদিন (৯ জানুয়ারী) সাংবাদিকদের সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামলীগ, স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টি এবং বিরোধী দল নিয়ে সংসদ গঠন ও শপথ নেওয়ার  বিষয়ে সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

Comparison: Rumor Scanner 

৫ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির কোনো অংশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ’বিয়ে’ ও ‘দেনমোহর’ বিষয়ক কোনো কথা বলেননি।

এদিকে, দেনমোহর ধার্য করা প্রসঙ্গে নতুন কোনো আইন প্রণয়নের তথ্য বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১-এ দেনমোহরের জন্য কোনো সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারিত নেই।

অর্থাৎ, বিয়ে সহজের জন্য ২০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে আইন পরিবর্তনের দাবিটি মিথ্যা।

এছাড়া পূর্বে “মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর এবং ছেলেদের ১৮ বছর নির্ধারণ করে নতুন আইন পাস হয়েছে “ শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সে বিষয়টি শনাক্ত করে ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রিউমর স্ক্যানার টিম।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধে প্রস্তাবিত এক আইনে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি বিয়ের বয়স কমিয়ে নারীদের জন্য ১৬ এবং পুরুষদের জন্য ১৮ করা হয়। তবে উক্ত আইনটি সেসময় চূড়ান্তভাবে পাস হয়নি।

আরও জানা যায়, ২০১৭ সালে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়। সেবছরের মার্চে বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। উক্ত আইনে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১ বছর রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালের পরবর্তী সময়ে এই আইন সংশোধন কিংবা এ বিষয়ে নতুন কোনো আইন পাস হয়নি।

অর্থাৎ, মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৪ এবং ছেলেদের ১৮ করে আইন পরিবর্তনের দাবিটিও মিথ্যা। কারণ, বাংলাদেশের বর্তমান আইন অনুযায়ী বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১। 

মূলত, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছবি ব্যবহার করে ‘বিয়ে সহজের জন্য আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন আইনমন্ত্রী। ২০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য এবং বিয়ের সর্বনিম্ন বয় ছেলেদের ১৮ ও মেয়েদের ১৪ করা হলো” শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক মাধ্যম টিকটকে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনমন্ত্রীর ছবিটি চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ভিন্ন এক প্রসঙ্গের। এছাড়া বাংলাদেশের আইনে দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারিত নয় এবং আইন অনুযায়ী বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলের ক্ষেত্রে ২১। সম্প্রতি এ আইন পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো তথ্য বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, বিয়ে সহজ করতে আইনমন্ত্রী কর্তৃক আইন পরিবর্তনের আলোচ্য দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img