সম্প্রতি ‘সুলতান’স ডাইনে কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি খাওয়ানো হতো, ল্যাবটেস্টে প্রমাণিত‘ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর সুলতান’স ডাইন রেস্তোরাঁর কাচ্চি
বিরিয়ানিতে কুকুরের মাংস থাকার বিষয়টি ল্যাবটেস্টে প্রমাণিত দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং সুলতান’স ডাইনের বিরিয়ানির মাংসের কোন ধরনের ল্যাবটেস্টই করা হয়নি। তবে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসি ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মাংস ব্যবহারের প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম সমকাল এর অনলাইন সংস্করণে গত ১৩ মার্চ ‘সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি: ভোক্তা অধিকার’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রেস্তোরাঁটি সরেজমিনে তদন্ত এবং অভিযুক্তের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য পর্যালোচনা করে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, সুলতান’স ডাইন ‘মা বাবার দোয়া গোস্ত বিতান, কাপ্তান বাজার’নামক ভেন্ডরের মাধ্যমে খাসির গোস্ত সংগ্রহ করে থাকে। কাপ্তান বাজারে খাসি জবাই করার সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাঝে মধ্যে উপস্থিত থাকেন। ভেন্ডর নিজ দায়িত্বে মাংস অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানে মাংস পৌঁছায়।
সমকালের তথ্যমতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মার্চ বিকেল আনুমানিক পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনের গুলশান-২ শাখা সরেজমিনে তদন্ত করা হয়। আজ ১৩ মার্চ সোমবার অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জিএম, এজিএম এবং ওই শাখার ম্যানেজার শুনানিতে উপস্থিত হয়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। সন্দেহযুক্ত চিকন হাড়ের ব্যাপারে গত ৯ মার্চ সুলতান’স ডাইনের ম্যানেজার মৌখিকভাবে ১৫০ কেজি খাসির মাংস সংগ্রহের কথা জানান। কিন্তু ভেন্ডর ১২৫ কেজি সরবরাহের কথা জানান। সন্দেহযুক্ত চিকন হাড়ের ব্যাপারে অভিযুক্ত জানান যে, ৭ থেকে ৯ কেজি ওজনের খাসির মাংস তারা ব্যাবহার করেন। আকারে ছোট হওয়ায় এসব খাসির হাড় চিকন হয়।
খাসি বাদে অন্য প্রাণীর মাংসের ব্যবহার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সুলতান’স ডাইনকে অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন ভোক্তার মহাপরিচালক।
সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে কোনো স্যাম্পল নেই, তাই মাংসের পরীক্ষা বা এ নিয়ে মতামত প্রদান সম্ভব না। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) মাংসের ল্যাব টেস্ট করাবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া, মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এর ওয়েবসাইট গত ১৩ মার্চ ‘ভোক্তার শুনানিতে সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগকারীকে পাওয়া যায়নি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুলতান’স ডাইনের বিরুদ্ধে অন্য কোনও প্রাণির মাংস ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে শুনানি করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সোমবার (১৩ মার্চ) সকালে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সুলতান’স ডাইনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও অভিযোগকারী ব্যক্তিকে খুঁজে পায়নি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
ঘটনার সূত্রপাত
গত ৫ মার্চ সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস নিয়ে প্রশ্ন তুলে Kanak Rahman Khan নামের একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করেন। পোস্টে দাবি করা হয়, কাচ্চিতে পাওয়া চিকন হাড্ডিযুক্ত মাংস খাসির নয়, বরং অন্য প্রাণির।

এরপরই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তখন ওই পোস্টের পক্ষে বিপক্ষে নেটিজেনরা নিজেদের যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে পোস্ট দেন।
নেটিজেনদের কেউ কেউ মূল পোস্টের অভিযোগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন মানহানিকর অভিযোগ তোলার বিষয়ে সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে অভিযোগকারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন এবং অ্যাকাউন্টটি ডিএক্টিভেট করে দেন। তবে পোস্ট মুছে দেওয়ার পূর্বেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে পোস্ট করা হয়। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।

অন্যদিকে, মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাচ্চিতে মাংস নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ। মাংস নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ নিষ্পত্তির পর এখন আইনি ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সোমবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুলতান’স ডাইনের একজন অংশীদার সাজিদ জামান।

পাশাপাশি সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষ তাদের ফেসবুক পেজে আলোচিত বিষয়টি নিয়ে একটি পোস্ট দেয়। যেখানে তারা জানায়, একটি মিথ্যা অভিযোগের আলোকে সোশাল মিডিয়াতে বিতর্ক সৃষ্টি করে সুলতান’স ডাইনের সুনাম ক্ষুন্ন করে ভোক্তাদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। পোস্টটি দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।

অর্থাৎ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির ল্যাব টেস্টই হয়নি।
মূলত, সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে সুলতান’স ডাইন রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে কাচ্চিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণির মাংস দেওয়ার অভিযোগ ওঠে৷ এরপর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এনিয়ে যথাযথ প্রমাণ ছাড়াই নেতিবাচক তথ্য প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ভোক্তা অধিদপ্তরের রেস্টুরেন্টটিতে অভিযোগ চালায়। তবে সেখানে অন্য প্রাণির মাংস ব্যবহারের প্রমাণ পায়নি ভোক্তা অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, দৈনিক যুগান্তরকে কথিত সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে কুকুর-বিড়ালের মাংস দিয়ে সুলতান’স ডাইনে কাচ্চি তেরি হয় দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হলে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
উল্লেখ্য, এর আগেও সাভারের আশুলিয়ায় কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বিক্রির অভিযোগ ওঠে এক হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে। তখন ল্যাব রিপোর্ট প্রকাশের আগেই হোটেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ল্যাব রিপোর্টে জানা যায়, সেই মাংস কুকুরের ছিল না। এবিষয়ে প্রতিবেদন দেখুন এখানে। আর্কাইভ দেখুন এখানে।
সুতরাং, রাজধানীর সুলতান’স ডাইন রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি খাওয়ানোর বিষয়টি ল্যাবটেস্টে প্রমাণিত শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ittefaq: সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি
- Bangla Tribune: ভোক্তার শুনানিতে সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগকারীকে পাওয়া যায়নি
- Samakal: সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি: ভোক্তা অধিকার
- Bangla Tribune: ভোক্তার শুনানিতে সুলতান’স ডাইন নিয়ে অভিযোগকারীকে পাওয়া যায়নি
- Rumor Scanner Own Analysis