বুধবার, অক্টোবর 4, 2023
spot_img

কিশোরগঞ্জ এবং নরসিংদীতে আগুন লাগার ঘটনা ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়

সম্প্রতি “কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চন্ডিব গ্রামে হিন্দু বাড়িতে এবং নরসিংদীতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে (অনুবাদিত)” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

 টুইটারে ছড়িয়ে পড়া এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ দেখুন এখানে এবং এখানে

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। পোস্টটির আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে

একই ভিডিওটিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হিন্দুদের বাড়িতে ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত অগ্নিসংযোগ দাবিতে ফেসবুকে ও টুইটারে প্রচার করা হচ্ছে।

 টুইটারে ছড়িয়ে পড়া এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

ফেসবুকে  ছড়িয়ে পড়া এমন পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন  এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চন্ডিব গ্রামে হিন্দু বাড়িতে এবং নরসিংদীতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে আগুন দেওয়ার ঘটনার কোনোটিই ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় এবং প্রচারিত ভিডিওটি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নয় বরং এটি নরসিংদীতে হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, নরসিংদীর স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম Narsingdir Konthosor এর ফেসবুক পেজে ২১ আগস্ট “নরসিংদীর ঘোড়াশাল অগ্নিকাণ্ডে ৪ দোকান পুড়ে ছাই!” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২২ আগস্ট রাত সোয়া ৩টার দিকে নরসিংদীর ঘোড়াশালের পৌর এলাকার ধলাদিয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ৪টি দোকান পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি এ আগুনে তাদের প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। রাতেই খবর পেয়ে পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রচারিত অগ্নিকাণ্ডের ভিডিওটি কি কিশোরগঞ্জের ভৈরবের?

উক্ত ভিডিওটির সাথে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে হিন্দুদের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিওটি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অগ্নিসংযোগের ঘটনার নয়। এটি নরসংদীতে হিন্দুদের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার।

পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত ভৈরবে সংঘর্ষে আহত ১০, বাড়ি ভাঙচুর আগুন শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Jugantor website

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে কিশোরগঞ্জের চন্ডিব এবংপলতাকান্দা এলাকায় দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা হয়। ৩ ঘন্টা ব্যাপী স্থায়ী হওয়া এই  সংঘর্ষে ২০ জন আহত, ১০টি দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিসাধন হয়। পুলিশের সূত্র অনুযায়ী সংঘর্ষের কারণ হিসেবে জানানো হয়, ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকায় একটি প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।

পাশাপাশি, দৈনিক বার্তা বাজারের ওয়েবসাইটে গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত  ভৈরবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২৫ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, চন্ডিবের ও পুলতাকান্দা দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৫/৬টি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর ও দোকান পাট ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

অর্থাৎ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং নরসিংদীর ঘটনা দুটির সাথে সাম্প্রদায়িকতার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

মূলত, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগে ঘোড়াশালের পৌর এলাকার ধলাদিয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি দোকান পুড়ে যায় এবং কিশোরগঞ্জে প্রেমঘটিত ঘটনার জের ধরে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই ঘটনা দুটিকেই হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত হামলা দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার এবং ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, নরসিংদীতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মিথ্যা দাবিটি ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

সুতরাং, নরসিংদীতে শর্ট সার্কিটের কারণে হিন্দুদের দোকানপাটে আগুন এবং কিশোরগঞ্জে প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাকে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত হামলা দাবিতে ফেসবুক ও টুইটারে প্রচার করা হছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img