শনিবার, সেপ্টেম্বর 23, 2023
spot_img

নরসিংদীতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি “ঘোড়াশাল, পলাশ, নরসিংদী পলাশ উপজেলার ধলাদিয়া মন্দিরের পাশের রাস্তার মোড়ে হিন্দু ব্যাবসায়ী পঙ্কজ ধর ও ঝন্টু ভক্তের দোকানে রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা,পুরে ছারখার চারটি দোকান। উক্ত ঘটনায় প্রমানিত হয়েছে। বাংলাদেশে কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদ নয়, তাদের ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান, নিরাপদ নয়” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নরসিংদী পলাশ উপজেলার ধলাদিয়া মন্দিরের পাশের রাস্তার মোড়ে হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবিটি সত্য নয় বরং বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে দোকানগুলোতে আগুন লেগেছে।

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যম amarsangbad.com এ ২২ আগস্ট “ঘোড়াশালে আগুনে পুড়লো ৪ দোকান, ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from amarsangbad website

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ধলাদিয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি দোকান পুড়ে যায়। রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এসময় স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় ঐ বাজারের একটি মুদী দোকান ও পোল্ট্রি ফিডের দোকানসহ ৪টি দোকান ও মালামাল সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

প্রতিবেদনটিতে আগুন লাগার কারণ হিসেবে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার সাদিকুল বারীকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে নরসিংদীর স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম Narsingdir Konthoshor এর ফেসবুক পেজে ২১ আগস্ট “নরসিংদীর ঘোড়াশাল অগ্নিকাণ্ডে ৪ দোকান পুড়ে ছাই!” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন দুইটির কোথাও দোকানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আরও নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিমের পক্ষ থেকে নরসিংদী পলাশ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার সাদিকুল বারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “আগুন নেভানোর পরে প্রাথমিকভাবে আমরা সেখানে আগুন লাগার কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করেছি। যে চারটি দোকান পুড়ে গেছে, সে চারটি দোকান পার্টিশন দিয়ে একটা ঘরের ভিতরেই ছিল। এই চারটির দোকানের কোনোটিতেই বৈদ্যুতিক মিটার ছিল না। এই দোকানগুলোতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক লাইন বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে আসা। আগুন নেভানোর পর আমরা কারণ খুঁজতে গিয়ে মশাল কয়েল বা এই জাতীয় কোনো কিছু পাইনি।”

তিনি আরও বলেন, “ভুক্তভোগীদেরও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি যে, কোনো শত্রুতার জেরে এমন করা হয়েছে কি না? সেটাও তারা অস্বীকার করেছে। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, যেহেতু দোকানগুলোর বৈদ্যুতিক লাইনগুলো নিরাপদ না, তাই এখান থেকেই আগুন লাগতে পারে।”

এছাড়া রিউমর স্ক্যানার টিম থেকে নরসিংদী পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াছের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়।

তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, “হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানে রাতের আঁধারে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সঠিক না। এটা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে লেগেছে।

মূলত, নরসিংদীর পলাশের ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ধলাদিয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি দোকান পুড়ে যায়। রাতে বাজারের একটি দোকান থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তবে এই আগুন লাগার কারণ হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে লেগেছে। এছাড়া ভুক্তভোগীরাও এই ঘটনার সাথে কোনো ধরনের শত্রুতার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। কিন্তু এই ঘটনাটিকেই হিন্দু ব্যাবসায়ীদের দোকানে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, নরসিংদীতে হিন্দু ব্যাবসায়ীদের দোকানে রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তদের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img