সম্প্রতি, ইরানের ইয়াজুস শহরে মাছ বৃষ্টির ভিডিও দাবিতে দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন, একাত্তর টিভি, ঢাকা টাইমস২৪, অর্থসূচক, ঢাকা পোস্ট, করতোয়া, কালবেলা, মানবকন্ঠ, এমটিনিউজ, জণকণ্ঠ।
উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন, মিন্ট, নিউজ ১৮
উক্ত দাবিতে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন দেখুন, এআরওয়াই নিউজ।
গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইরানের ইয়াজুস শহরে মাছ বৃষ্টির ভিডিও দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং ভিডিওটি স্পেশাল ইফেক্ট কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
এই দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদগুলোতে দাবি করা হয়, গত ০৬ মে সোমবার ইরানের ইয়াসুজ অঞ্চলের বাসিন্দারা ইরানের ইয়াসুজ অঞ্চলের বাসিন্দারা ভারী বর্ষণের সঙ্গে আকাশ থেকে মাছ পড়ার ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন।
পরবর্তীতে ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে mahi-kadeh নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ৩ মে একই দাবিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওতে একাধিক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী নিজেদের ইরানের ইয়াজুস শহরের বাসিন্দা দাবি করে জানান যে, তারা সম্প্রতি ইয়াজুস শহরে কোন মাছ বৃষ্টি দেখেননি।
উক্ত মাহি খাদেহ ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় এটি ইরানের এক মাছ ব্যবসায়ীর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। পরবর্তীতে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ভিডিওটি আসল নয়। তবে ভিডিওটির মালিক সে নয়, সে ভিডিওটি সংগ্রহ করেছে।
এ প্রসঙ্গে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইরানি গণমাধ্যম ফারারুর ওয়েবসাইটে ‘(Video) The images of fish raining in Yasuj are fake.’ (অনূদিতয) শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে আলোচ্য ভিডিওটি সম্পর্কে জানানো হয়, ইরানের ইয়াসুজ অঞ্চলে মাছ বৃষ্টি দেখা গেছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তবে গণমাধ্যমটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং গ্রাফিক্স টুলস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ইরানের আরও দুই গণমাধ্যম তেজারত নিউজ এবং কেবনা নিউজও একই তথ্য জানায়।
পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্কের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইরান ভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্টনামেহর টুইটার অ্যাকাউন্টে আলোচ্য ভিডিওটির প্রসঙ্গে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির ক্যাপশনে জানানো হয়, ইয়াসুজে আকাশ থেকে মাছ পড়ার ভিডিওটি আসল নয় এবং বিশেষ ইফেক্ট ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওর প্রাথমিক সেকেন্ডগুলিতে মাটিতে অসংখ্য মাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়, কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরে কিছু মাছ অদৃশ্য হয়ে যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণেও একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া সম্প্রতি ইরানের আবহাওয়া সংস্থা মাছ বৃষ্টির কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ২০২০ সালে ঘটা প্রায় কাছাকাছি একটি ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। ২০২০ সালে ইরানের পুলিশ তেহরানের মিলাদ টাওয়ারের কাছে আকাশ থেকে বেগুন পড়ার একটি প্র্যাঙ্ক ভিডিওর জন্য পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করছিল। ভিডিওটি তৈরির পেছনে থাকা ব্যক্তিরা দাবি করেছিলেন, বিশেষ ইফেক্টের উপর গবেষণাকালীন ভুলবশত ওই ক্লিপটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হয়ে যায়।
অর্থাৎ, ইরানের আকাশ থেকে মাছ বৃষ্টি হওয়ার ভাইরাল ভিডিওটি ভুয়া।
মাছ বৃষ্টি কি বাস্তবে সম্ভব?
বাস্তবে মাছ বৃষ্টি সম্ভব কি-না এই বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের এই বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. ক্রিস্টোফার এস. বেয়ার্ড জানান, মাছের আকাশ থেকে পড়ার ঘটনা বিরল হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর উদাহরণ মিলে। এই ঘটনা সাধারণত “বৃষ্টি” নামে পরিচিত হলেও এটি সাধারণ বৃষ্টির মতো জলীয় বাষ্পের ঘনীভূত হওয়ার ফলে ঘটে না। প্রকৃতপক্ষে, যে মাছগুলো আকাশ থেকে পড়ে তারা আগে সমুদ্রে ছিল। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গভীর পর্যবেক্ষণ কম থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মত হচ্ছে, এর পেছনে টর্নেডো দায়ী। যখন টর্নেডোগুলি জলাশয়ের উপর দিয়ে যায়, তখন এগুলো ওয়াটারস্পাউট হিসেবে পরিচিত হয় এবং সাগর বা লেকের পানি এবং সেখানে বাস করা মাছ বা অন্যান্য প্রাণীদের শোষণ করে নেয়। এই প্রাণীগুলো টর্নেডোর ঘূর্ণনে আকাশে উঠে যায় এবং বাতাসের গতি কমে আসলে মাটিতে পড়ে। বিল ইভান্সের মেটিওরোলজির বই “It’s Raining Fish and Spiders” অনুসারে, প্রতি বছর প্রায় ৪০ বার এমন ঘটে। সাপ, কৃমি, কাঁকড়া সহ বিভিন্ন প্রাণী আকাশ থেকে পড়েছে, তবে মাছ এবং ব্যাঙ সবচেয়ে সাধারণ। এমনকি স্কুইড এবং অ্যালিগেটরের পড়ার ঘটনাও জানা গেছে। মেঘের উচ্চতায় নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রাণীগুলি প্রায়শই বরফ বা শিলার স্তরে আবদ্ধ হয়ে যায়, যা তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার পরও থাকতে পারে। এই ধরনের বরফে মোড়ানো প্রাণীর পতন খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
মূলত, ইরানের ইয়াজুস শহরে মাছ বৃষ্টি ঘটেছে দাবিতে একটি ভিডিও গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি বাস্তব নয়। প্রকৃতপক্ষে, শহরটিতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। শহরের একাধিক বাসিন্দা সামাজিক মাধ্যমে জানান তারা এমন ঘটনা দেখেনি। ইরানের আবহাওয়া সংস্থাও এমন কোনো ঘটনার কথা জানায়নি। এছাড়া ভিডিওটির পর্যবেক্ষণে কিছু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা স্পেশাল ইফেক্টের সাহায্যে নির্মিত ভিডিওতে দেখা যায়।
সুতরাং, স্পেশাল ইফেক্ট কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা একটি ভিডিওকে ইরানের ইয়াজুস শহরে মাছ বৃষ্টির দৃশ্যে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Fararu – (ویدئو) تصاویر بارش ماهی در یاسوج جعلی است
- Kebna News – “فیلم| تصاویر بارش ماهی در یاسوج جعلی است
- Tejarat News – ببینید| ویدئوی بارش ماهی در یاسوج جعلی است