সম্প্রতি, “ভারতের নুপুর শর্মা ইসুতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম গুলো অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রচার করে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতা সৃষ্টি করার জেরে, বাংলাদেশে পন্য আমদানি রফতানি বন্ধ করলো ভারত।” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নুপুর শর্মা ইস্যুতে ভারত পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করেনি বরং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জরিমানা বৃদ্ধি ও কাস্টমস লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি প্রত্যাহারের দাবিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম সমকালের অনলাইন সংস্করণে গত ৭ জুন “ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি রপ্তানি বন্ধ”, শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়; বাংলাদেশ থেকে আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে জরিমানার অর্থ বৃদ্ধি এবং কাস্টমস হাউজ এজেন্ট (সিএইচএ) লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কড়াকড়ির অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি ও রপ্তানি মঙ্গলবার প্রতীকীভাবে বন্ধ রেখেছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।
পাশাপাশি, দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি এর অনলাইন সংস্করণে গত ৭ জুন “বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়; জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে বেনাপোল বন্দরে কর্মবিরতি চলছে। ফলে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
মূলত, ২০২০ লাইসেন্সিং বিধিমালা সংশোধনের অনুরোধ আমলে না নেওয়ায় ৫ই জুন ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ৭ই জুন কর্মবিরতি ঘোষণা দেয় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। একইসাথে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জরিমানা বৃদ্ধি এবং কাস্টমস হাউজ এজেন্ট লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কড়াকড়ি হওয়ার অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবিতে ৭ই জুন আমদানি ও রপ্তানি প্রতীকীভাবে বন্ধ রাখে ভারতের ব্যবসায়ীরা। এই কর্মবিরতির ঘটনাকেই “নুপুর শর্মা ইস্যুতে বাংলাদেশে পন্য আমদানি রফতানি বন্ধ করলো ভারত” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (৭ জুন) শুধুমাত্র একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা তথা পূর্ণদিবস বেনাপোল, আখাউড়া, বাংলাবান্ধা বন্দরসহ দেশের ১১টি শুল্ক স্টেশনে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এই ধর্মঘটের ফলে সরকার একদিনে ৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মাসহ দুই নেতার আপত্তিকর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী, ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধিগণ।
সুতরাং, বাংলাদেশ থেকে আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক জরিমানা বৃদ্ধি ও কাস্টমস লাইসেন্স তৈরীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কড়াকড়ি হওয়ার অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার ঘটনাকে “নুপুর শর্মা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশে পন্য আমদানি-রফতানি বন্ধ করেছে” দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।