রবিবার, ডিসেম্বর 10, 2023
spot_img

চীনের ডংগুয়ান শহরে পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই

সম্প্রতি ‘যে শহরে পুরুষের একাধিক প্রেমিকা থাকা বাধ্যতামূলক’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন দেখুন চ্যানেল২৪, ঢাকা পোস্ট, ইনকিলাব, ইত্তেফাকবাংলাদেশ প্রতিদিন, বিবার্তা২৪, জনকণ্ঠ, নিউজ২৪, ডেইলি বাংলাদেশ, নয়া শতাব্দী২৪, জুম বাংলা, নিউজ জি২৪, প্রতিদিনের সংবাদ, ডেল্টা টাইমস২৪, শেয়ার নিউজ২৪নিউজ নাউ২৪, এমটিনিউজ২৪, দ্যা ডেইলি মিরর অব বাংলাদেশ, প্রতিদিনের চিত্র বিডি, অ্যা ইউএস বাংলা নিউজ, বেঙ্গলি টাইমস

একই দাবিতে দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে সংবাদটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়। তবে প্রতিবেদনের আর্কাইভ কপি পাওয়া যায়নি।

ডংগুয়ান

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন কলকাতা২৪*৭

বিগত বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন বাংলাভিশন, দৈনিক করতোয়া, দূরবীন নিউজ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)। 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে যা দাবি করা হচ্ছে

চীনের গুয়াংঝায়ের ডংগুয়ান শহরে প্রত্যেকেরই থাকে দুজন থেকে তিনজন করে প্রেমিকা। কারণ, এই শহরের প্রায় সব পুরুষে বহুগামী। একজন মাত্র প্রেমিকার সঙ্গে থাকার এখানে কোনো নিয়ম নেই। এই নিয়মের জন্য দায়ী ওই অঞ্চলের নারী ও পুরুষের অনুপাত। এই শহরে প্রতি ১০০ জন নারী পিছু পুরুষের সংখ্যা ৮৫।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চীনের গুয়াংঝায়ের ডংগুয়ান শহরে পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখার বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রকৃতপক্ষে শহরটিতে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা বাধ্যতামূলকভাবে রাখার বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং সেখানে নারী-পুরুষের সংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কারণে শহরটিতে একজন পুরুষ একাধিক প্রেমিকা রাখেন।

দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে উল্লিখিত সূত্রে ইয়াহু নিউজে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ‘Chinese ‘City Of Sex’ Has So Many More Women The Men Have ‘Several’ Girlfriends’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়,  ডংগুয়ান শহরের স্থানীয় ফ্যাক্টরিগুলো নারীদেরকে পুরুষদের চেয়ে চাকরি ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছিল। কারণ, তারা পুরুষদের চেয়েও বেশি নির্ভরযোগ্য। ফলে শহরটিতে পুরুষদের পার্ট টাইম জবেই যেত হতো। আর এর ফলে তারা অবসর সময়ও বেশি পেত। 

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, চীনের এক সন্তান নীতির কারণে নারীর সংখ্যা দেশটিতে বেড়ে গেছে এবং নারী-পুরুষের সংখ্যায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনটিতে গুয়াংঝায়ের নারী অধিকার ও তথ্যসেবা কেন্দ্রের বরাতে বলা হয়, একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা হিসেবে থাকার ক্ষেত্রে নারীরা একে অপরকে না চেনার ভান করে থাকে বা বিষয়টিকে সেভাবে গ্রাহ্য করে না। তবে অধিকাংশ নারীরা শহরের এমন জীবনযাপনকে অস্থায়ী হিসেবে দেখে এবং বিয়ে করার জন্য বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে এমন জীবনযাপনকে পরিহার করেন। 

অনুসন্ধানে পুরো প্রতিবেদনটির কোথাও  ডংগুয়ান শহরে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

পরবর্তীতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকেতে ২০১৫ সালের একইদিনে ‘The Chinese city where men have ‘three girlfriends because there are so many women’’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একই বিষয়ের উপর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও ‘একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক’ এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

বরং প্রতিবেদনটিতে ডংগুয়ান শহরে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখার বিষয়টি  নারী-পুরুষের সংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কারণে হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়, শহরটিতে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ রয়েছে ৮৯ জন। এছাড়া ডংগুয়ানের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও পুরুষদের তুলনায় নারী কর্মীদের নির্ভরযোগ্য মনে করে। ফলে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা বা নারী সঙ্গী থাকার বিষয়টি এখানে স্বাভাবিক মনে করা হয়। 

এছাড়া সে সময়ে প্রকাশিত অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজেও ‘একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক’ এই দাবির পক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে প্রকাশিত এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন

বরং এ সমস্ত প্রতিবেদন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চীনের ডংগুয়ান শহরে নারী-পুরুষের সংখ্যার ভারসাম্যহীনতা ও পূর্ণ সময়ে চাকরি না থাকায় একজন পুরুষ একাধিক প্রেমিকা রাখেন এবং নারীরাও এতে সম্মতি দেন। তবে পুরো বিষয়টিই স্বেচ্ছায়, এখানে বাধ্যবাধকতার কোনো বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

অপরদিকে চীনের ডংগুয়ান শহরে নারী-পুরুষের সংখ্যার অনুপাত সম্পর্কে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বর্তমানে শহরটিতে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ আছেন ১৩৯ জন। ২০২১ সালে এই অনুপাতটি ছিল ১০০ জন নারীর বিপরীতে ১৩৯ জন পুরুষ। 

অর্থাৎ দেশীয় গণমাধ্যমে ডংগুয়ান শহরে ‘একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক’ শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোতে শহরটিতে নারী-পুরুষের সংখ্যার যে অনুপাত দেখানো হয়েছে, তাও সাম্প্রতিক সময়ের নয়। 

মূলত, ২০১৫ সালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে চীনের ডংগুয়ান শহরে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা নিয়ে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, শহরটিতে নারী-পুরুষের সংখ্যার ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং পুরুষের পূর্ণ সময়ে চাকরি না থাকায় একজন পুরুষ একাধিক প্রেমিকা রাখছেন। সম্প্রতি পুরানো এই প্রতিবেদনগুলোর সূত্রেই দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাবি করা হচ্ছে, শহরটিতে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক। তবে অনুসন্ধানে ডংগুয়ান শহরে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, চীনের গুয়াংঝায়ের ডংগুয়ান শহরে একজন পুরুষের একাধিক প্রেমিকা রাখা বাধ্যতামূলক দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RS Team
RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img