সম্প্রতি, দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটারের দেখা মিললো হবিগঞ্জে শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু রিল ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশে রোবট দিয়ে রেস্টুরেন্টে ওয়েটার সার্ভিস পরিচালনার ঘটনা হবিগঞ্জে প্রথম নয় বরং ২০১৭ সালে দেশে প্রথম ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে এই সার্ভিস চালু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম আমাদের সময়.কম এর ওয়েবসাইটে গত ২৫ জুন ‘হবিগঞ্জে প্রথম ‘নারী’ রোবটের খাবার সরবরাহ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কে আলেয়া-আহনাফ টাওয়ারের ৩য় তলায় ‘কিচেন-২০’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রেস্টুরেন্টটি সম্প্রতি রোবটের মাধ্যমে ভোক্তাদের ওয়েটার সার্ভিস দিচ্ছে।
এছাড়া একই বিষয়ে মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন যমুনা টিভি, জনকণ্ঠ ও বাংলানিউজ২৪।
গণমাধ্যম গুলোর প্রতিবেদনে সম্প্রতি হবিগঞ্জে রেস্টুরেন্টে রোবোটিকস ওয়েটার সার্ভিস চালুর কথা উল্লেখ করা হলেও কোনো গণমাধ্যমেই এই ঘটনা হবিগঞ্জেই দেশের প্রথম বলে উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটার সার্ভিস চালু করা রেস্টুরেন্ট কোনটি সেই তথ্য উদঘাটনের জন্য অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে মূলধারার ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম ‘এনটিভি’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ‘বাংলাদেশে প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট যাত্রা শুরু করে। যেখানে ভোক্তাদের অর্ডার অনুযায়ী ওয়েটারের ন্যায় রোবট কর্তৃক খাবার সরবরাহের কথা বলা হয়।
সেদিন রেস্টুরেন্টটি উদ্বোধন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ ও চীনা রোবট প্রস্তুতকারী সংস্থা এইচ জেড এক্স ইলেকট্রনিক টেকনোলজি কোম্পানি যৌথ সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা এটিকে বাংলাদেশে বাংলাদেশে প্রথম রোবট কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা রেস্টুরেন্ট বলে জানান।
উক্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা’র ওয়েবসাইটে ‘ঢাকার প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশনকারী চীনা রোবট’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনেও ঢাকার এই রেস্টুরেন্টে দেশে প্রথম রোবোটিকস ওয়েটার চালুর কথা বলা হয়।
এছাড়া একই দাবিতে সেসময় মূলধারার বেশকয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলো দেখুন: দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ঢাকা টাইমস, কালেরকণ্ঠ, ঢাকা ট্রিবিউন এবং সমকাল।
মূলত, সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলা শহরের ‘কিচেন-২০’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে ভোক্তাদেরকে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস প্রদান চালু হয়েছে। উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ‘দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটারের দেখা মিললো হবিগঞ্জে’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে ২০১৭ সালে ঢাকার আসাদ গেইট এলাকায় একটি রোবট রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের তথ্য জানা যায়। যেখানে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস চালু হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের পূর্বে দেশের কোনো রেস্টুরেন্টে রোবট দ্বারা ওয়েটার সার্ভিস অর্থাৎ ভোক্তাদের খাবার সরবরাহের তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পূর্বেও দেশের প্রথম ঘটনা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া গুজব শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে এবং এখানে।
সুতরাং, দেশের প্রথম রোবোটিকস ওয়েটারের দেখা মিললো হবিগঞ্জে শীর্ষক দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- বিবিসি বাংলা: “ঢাকার প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশনকারী চীনা রোবট“
- ডেইলি স্টার: “ঢাকায় চালু হল রোবট রেস্টুরেন্ট“
- প্রথম আলো: “ঢাকায় রোবট রেস্টুরেন্ট“
- সমকাল: “ঢাকার রেস্টুরেন্টে রোবট পরিবেশক“
- কালের কণ্ঠ: “ধানমণ্ডিতে রোবট রেস্টুরেন্ট চালু“
- ঢাকা ট্রিবিউন: “First robot restaurant launched in Dhaka“
- ঢাকা টাইমস: “দেশের প্রথম ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ চালু“
- এনটিভি: “বাংলাদেশে প্রথম রোবট রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু“
- আমাদের সময়.কম: ”হবিগঞ্জে প্রথম ‘নারী’ রোবটের খাবার সরবরাহ”
- যমুনা টিভি: (ভিডিও প্রতিবেদন)
- জনকণ্ঠ: “এবার বাংলাদেশেও রেস্টুরেন্টে খাবার সরবরাহ করছে রোবট“
- বাংলানিউজ২৪: “হবিগঞ্জের রেস্তোরাঁয় খাবার সরবরাহ করছে রোবট!“
- Rumor Scanner Analysis