আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভারতীয় শিশুকে বাংলাদেশী শিশু জান্নাত দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি, “আসসালামু আলাইকুম দয়া করে কেউ এরিয়ে যাবেন না প্লিজ, সাহায্য করতে না পারলেও দয়া করে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন” শীর্ষক শিরোনামে একটি শিশুর ছবি সংযুক্ত করে শিশুটিকে বাংলাদেশী জান্নাত দাবিতে একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশু জান্নাত নামে প্রচারিত ছবিটি কোনো বাংলাদেশি শিশুর নয় বরং এটি ভারতের রোগাক্রান্ত শিশু আফিয়ার ছবি। 

রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে, ভারতের গণ-অর্থায়ন প্লাটফর্ম ‘Ketto’ এর অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ০৭ জানুয়ারীতে “Please Save My Aafiya, She Is On The Verge Of Dying” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওতে রোগাক্রান্ত যে শিশুটিকে দেখানো হয়েছে তার সাথে আলোচিত ছবির শিশুটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। 

ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, শিশুটির নাম আফিয়া। ছয় বছর বয়সী শিশুটি গওচার ডিজিজ নামক রোগে আক্রান্ত। 

ভিডিওর ক্যাপশনে সংযুক্ত লিংকের সূত্র ধরে Ketto এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়।  

প্রতিবেদনে থাকা আবেদনটিতে যুক্ত করা বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে শিশুটি ২০১৭ সাল থেকে গাউচার ডিজিজ নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল। তাকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় ছিল ব্যয়বহুল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। এই অস্ত্রোপচারের পর তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য ৩ মাস হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন ছিল।

একই প্রতিবেদনের ‘Update’ অংশে আফিয়ার বাবা মোহাম্মদ মহসিনের একটি কমেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি জানান, তার মেয়ে আগের চেয়ে ভালো আছে এবং নিয়মিত চেকআপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।  তিনি আফিয়ার একটি ছবিও প্রকাশ করেন সেই কমেন্টে।

এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে জান্নাত নামে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদনকৃত ফেসবুক পোস্টগুলোয় উল্লিখিত ব্যক্তিগত বিকাশ ও নগদ নাম্বারে যথাক্রমে (01935353640, 01935353640, 01935353640, 01935353640) একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

মূলত, ছবিটি ভারতীয় শিশু আফিয়ার। শিশুটি গওচার ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু ভারতীয় এই শিশুর ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে বাংলাদেশি রোগাক্রান্ত শিশু জান্নাতের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, রিউমর স্ক্যানার টিম পূর্বেও বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে আর্থিক সাহায্য চেয়ে করা পোস্টগুলোকে শনাক্ত করে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সুতরাং, আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভারতীয় শিশু আফিয়াকে বাংলাদেশী শিশু জান্নাত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img