চাকসু নির্বাচনের নয়, এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ভিডিও

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চাকসু নির্বাচন চলাকালীন বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং চাকসু নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়েছে।

ফেসুবকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিডিওটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের সমর্থকদের সাথে ছাত্রদলের হওয়া ধস্তাধস্তির ঘটনার। আলোচিত ভিডিওতে সালাউদ্দিন আম্মারকেই দেখতে পাওয়া যায়। এর সাথে চাকসু নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার ভিডিওটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে দেখতে পায়। এছাড়াও তাকে বলতে শোনা যায়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে এবং রাকসু বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ভিডিওটিতে তাকে ‘চাকসু’ নয় বরং ‘রাকসু’ বলতে শোনা যায়। 

পরবর্তীতে সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনার মাধ্যমে গত ৩১ আগস্ট প্রচারিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রাপ্ত ১ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, সেদিন রাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার শেষ দিন ছিল। সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়ন ফরম নিতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বাহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেয়। ভিডিওটিতে তিনি উক্ত তথ্যগুলো জানিয়ে ছাত্রদল ও বহিরাগতদের প্রতিহত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসার আহ্বান জানান।

অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে উক্ত ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেসময় সালাউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী মনোনয়ন ফরম নিতে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে তাঁরা দেখেন ফটকে তালা ঝুলছে। তখন তারা সেখানে অবস্থান নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়ে ধস্তাধস্তিতে রূপ নেয়। ধারণা করা যাচ্ছে, এরপরই আম্মার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করেন।

এছাড়াও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ভিডিওবার্তা হিসেবে প্রথম ৩১ আগস্ট-ই ‘Voice of Faridpur । ভয়েস অব ফরিদপুর’ নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রচার করা হয়। সেদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যা পরবর্তীতে আরও ব্যাপকতা লাভ করে। 

সুতরাং, চাকসু নির্বাচন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবিতে চবি শিক্ষার্থীর ভিডিওবার্তা প্রচারের দাবিতে রাবির ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img