সম্প্রতি, ‘উঠায়ে নিয়ে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর নির্যাতন! নির্যাতিত চরম বিপদগ্রস্ত মেয়েটি লাইভে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন!’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
এছাড়া, একই ভিডিও বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা ধর্ষণের পর নির্যাতনের শিকার হয়ে সহযোগিতা চাওয়ার দাবিতেও প্রচার হতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওতে থাকা নারীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর নির্যাতন করে রক্তাক্ত করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, পারিবারিক কলহের কারণে নিজের মাথায় নিজে পানির গ্লাস দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত হয়েছেন ভিডিওতে থাকা উক্ত নারী।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলী তানজুম সরকার নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। ১৫ সেকেন্ডের উক্ত লাইভের সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

আলী তানজুম সরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে প্রচারিত ১৩ সেকেন্ডের আরেকটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে শুধু নারীকে ‘ও আল্লাহ’ বলতে শোনা যায়।
এছাড়া, ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে প্রচারিত আরও একটি লাইভ ভিডিওতে এই নারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম! কালকে আপনারা সবাই দেখছেন যে একটা ভিডিও আপলোড হয়ে গেছিলো। তো পারিবারিক একটা ব্যাপারে আমি আমার মাথায় আঘাত করাতে, হঠাৎ আমি জানি না কীভাবে ভিডিওটা আপলোড হয়ে গেছে। আমি কিছু বলতেও পারি নাই৷ তো এখন আমি ভালো আছি। যদি কেউ ভুলভ্রান্তি ভাবে নিয়া থাকেন আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন৷ আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।’
পরবর্তীতে ‘Channel A1’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আহত নারীর নাম নুসরাত তানজুম। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। উক্ত প্রতিবেদনে থাকা ভুক্তভোগী নারী এবং নারীর স্বামী বক্তব্য থেকে জানা যায়, পারিবারিক কলহের কারণেই উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে ভুক্তভোগী নারী শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন।
অর্থাৎ, পারিবারিক কলহের কারণেই নারী নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে রক্তাক্ত হয়েছেন।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ভিডিওতে থাকা নারী অর্থাৎ নুসরাত তানজুমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে নুসরাত তানজুমের স্বামী রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ধর্ষণ বা নির্যাতনের বিষয়টি মিথ্যা। আসলে পারিবারিক কারণে সে (নুসরাত তানজুম) রাগের মাথায় পানি খাওয়ার গ্লাস দিয়ে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে বসে। এতে রক্তাক্ত হয়ে যায়।’
সুতরাং, পারিবারিক কলহের কারণে নিজের মাথায় নিজে আঘাত করে রক্তাক্ত হওয়ার ভিডিওকে ‘উঠায়ে নিয়ে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর নির্যাতন! নির্যাতিত চরম বিপদগ্রস্ত মেয়েটি লাইভে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।