ভারতের গাদ্দারির দিন শেষ শীর্ষক মন্তব্য ড. ইউনূস করেননি

গত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এরপর থেকেই দেশে ভারতবিরোধী আওয়াজ জোরালোভাবে প্রচার হতে দেখা যায়। এরই প্রেক্ষিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ভারতের গাদ্দারির দিন শেষ। বাংলাদেশের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নিবে।” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড গত প্রায় দুইমাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে সম্প্রতি এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত পোস্টটি এককভাবে প্রায় ২০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৮ শত এরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ২০ হাজার বার দেখা হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের গাদ্দারির দিন শেষ শীর্ষক এরুপ কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেননি বরং, দৈনিক নয়া শতাব্দী এর ভিন্ন ঘটনার একটি ফটোকার্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে একই দাবিতে একই ফটোকার্ড সম্বলিত আরেকটি পোস্ট পাওয়া যায়। Suhail Ahmad Al Mahdi নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর উক্ত পোস্টটি করা হয়। উক্ত পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ছবিটি মূলত সম্প্রতি প্রচার হওয়া ফটোকার্ডেরই সম্প্রসারিত বা পূর্ণ সংষ্করণ৷ 

Comparison : Rumor Scanner

পূর্ণ ফটোকার্ডটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এতে নয়া শতাব্দী নামের একটি সংবাদমাধ্যমের লোগো বা নাম এবং ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে গত ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে নয়া শতাব্দীর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে এমন দাবি সম্পর্কিত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। তবে গত ০৭ সেপ্টেম্বর নয়া শতাব্দীর ফেসবুক পেজে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির একই ছবিযুক্ত “পিটিআইকে দেওয়া ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকার ভালোভাবে নেয়নি ভারত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটির ডিজাইন ও ফন্ট লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মূল ফটোকার্ডের সাথে এর ফন্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের পার্থক্য আছে যা নয়া শতাব্দীর ফটোকার্ডে সাধারণত দেখা যায়না।

Comparison : Rumor Scanner

অর্থাৎ, উক্ত ফটোকার্ডটির শিরোনাম এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।

উক্ত পোস্টের মন্তব্যের ঘরে থাকা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সীমান্ত হত্যা এবং তিস্তার পানি বণ্টনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সাক্ষাৎকারটি ভালোভাবে নেয়নি ভারত। ভারতীয় কয়েকটি সূত্র সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছেন, এই সাক্ষাৎকারের কারণে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূস ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নাও হতে পারে।”

অর্থাৎ, উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি মূলত ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই’কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটিতে আলোচিত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, নানা গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে।

সুতরাং, “ভারতের গাদ্দারির দিন শেষ, বাংলাদেশের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নিবে” শীর্ষক মন্তব্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা এবং প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img