তারেক রহমানকে রশিতে ঝুলিয়ে পেটানোর দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন ব্যক্তির ছবি প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতনের একটি ছবি প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “এই যে ঝুলিয়ে রেখে পিটাচ্ছে, বলতে পারবেন কে উনি? উনি আর কেউ নন “তারেক জিয়া”। আ*লীগকে পূর্নবাসন করার আগে বিএনপিকে বলব এই ছবিটার দিকে ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকবেন 🙏”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিতে রশিতে ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতনের শিকার এই ব্যক্তি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নন বরং, ২০০৭ সালে রতন কুমার নামে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত একজনকে বগুড়া সদর পুলিশ স্টেশনে নির্যাতনের ছবিকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারে ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারিতে ‘Police Brutality’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ছবি পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উক্ত ছবিটি সম্পর্কে বলা হয়, “চুরির অভিযোগে আটক রতনকে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি ২০০৭) বগুড়া সদর থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তবে পুলিশ তাকে গতকাল (২৬ জানুয়ারি ২০০৭) গ্রেপ্তার দেখায়। ছবি: স্টার” (অনূূদিত)

Comparison : Rumor Scanner

এছাড়াও, তুর্কি সংবাদমাধ্যম ‘Haber3’ এর ওয়েবসাইটে ‘বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ছবি!’ (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত) শিরোনামে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে আলোচিত ছবিটির সংযুক্তি পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “দুইটি গলার হার চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত এক চোরকে থানায় “প্যালেস্টাইনিয়ান হ্যাঙ্গার” কৌশল ব্যবহার করে নির্যাতন করা হয়। মোবাইল ফোনে ধারণ করা নির্যাতনের ফুটেজ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এটি দেশ ও বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। বাংলাদেশের বগুড়া শহরের এক থানায়, এই বিশেষ কৌশলে নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।  

ফুটেজ ফাঁস হওয়ার পর তিনজন জিজ্ঞাসাবাদকারী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের বিবৃতিতে জানানো হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক,” বিশেষ করে রতন কুমারের ক্ষেত্রে, যার কাছ থেকে দুইটি সোনার গলার হার উদ্ধার করা হয়েছিল।” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ছবিটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তির নাম রতন কুমার।

এছাড়াও, বার্তা সংস্থা এএফপি’র জাপানি সংস্করণ এএফপিবিবি’র ওয়েবসাইটেও আলোচিত ছবিটির সংযুক্তিসহ ২০০৭ সালে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে দেখা যায় যেখানে বলা হয় যে, ঘটনাটি ২০০৭ সালের ২৫শে জানুয়ারিতে বগুড়া থানায় ঘটেছিল এবং প্রদর্শিত ব্যক্তি চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন।

সুতরাং, ২০০৭ সালে চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত রতন কুমারকে রশিতে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ছবিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্যাতনের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img