শামীম ওসমান সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার গুজব

সম্প্রতি, শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বরং অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ক্লিপ ও ছবি যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

ভিডিও যাচাই- ১

আলোচিত ভিডিওটিতে একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে Dr. Fayzul Haq নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ৩ জুন “৫১ জনের ভিসা বাতিল! টাকা নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে! কোথাও যায়গা নেই। শেষ ঠিকানা বাংলাদেশ।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

Video Comparison: Rumor Scanner

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ড. ফয়জুল হক নামের ওই ব্যক্তি “সাপ্তাহিক আজকাল” নামক একটি অনলাইন পোর্টালে গত ৩ জুন “মার্কিন ভিসা বাতিল ৫১ বাংলাদেশির!” শীর্ষক শিরোনামে একটি একটি প্রতিবেদন পাঠ করতে শোনা যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ৫১ জন বাংলাদেশির ভিসা বাতিল করেছে। এ কার্যক্রম গত তিন মাসের। যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও শিল্পী।

তবে, প্রতিবেদনটিতে গ্রহণযোগ্য কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

ভিডিও যাচাই- ২

আলোচিত ভিডিওটির এই অংশে একই ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে DR. FAYZUL’S VOICE নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৭ মে “শামীম ওসমানকে ভিসা দেয়নি আমেরিকা! খেলা শুরু।” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। 

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। 

ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ড. ফয়জুল হক নামের একজন কোনো তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ না করে নিজের মনগড়া কথা বলছেন। 

Video Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে, শামীম ওসমান সহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম। অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ গণমাধ্যম ও বিশ্বস্ত সামাজিক মাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

তবে, দৈনিক যুগান্তরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।

পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বা রাজস্ব বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের Sanction Programs and Information সেকশনে শামীম ওসমান সহ ৫১ জনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত কোনো তথ্য যায়নি। 

এছাড়া, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মূলত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে  প্রচার হয়ে আসছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শামীম ওসমান সহ ৫১ জনকে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। ভিডিওটি নিয়ে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করেনা। অধিক ভিউ পাবার আশায় ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি সংবাদের থাম্বনেইল যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিগুলোর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। 

উল্লেখ্য, পূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তিকে জড়িয়ে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার গুজব প্রচার করা হলে সেগুলো শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুনএখানে এবং এখানে

সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৫১ জনকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছে দাবিতে ইন্টারনেটে  প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img