সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হওয়ার গুজব

সম্প্রতি, সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের গ্রেপ্তার শীর্ষক শিরোনাম উল্লেখপূর্বক থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

Desh tv 71 নামে একটি চ্যানেল থেকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১ হাজারেরও অধিক বার।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়,  সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার হওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বরং, অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওটিতে কোথাও সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের গ্রেফতার দাবি সম্পর্কিত সংবাদ বা সূত্র উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভিডিওটি’র থাম্বনেইলে প্রচারিত দাবিটির সাথে বিস্তারিত অংশের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ১০ মিনিট দুই সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংবাদ যাচাই ০১

এখানে বলা হয়, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না অভিযোগ করলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। 

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা যুগান্তর এর ওয়েবসাইটে গত ৫ মে ‘সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না: মঈন খান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

সেনাপ্রধান

Screenshot comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের বাকস্বাধীনতার জন্য আজ সংগ্রাম চলছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় সাধারণ মানুষ বাধা দেয় না, মানুষের কথা বলায় আরেকজন বাধা দেয় না, বাধা দেয় সরকার।

অর্থাৎ, এই সংবাদে সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সংবাদ যাচাই ০২

এখানে বলা হয়, জনগনই সরকার এবং নেতৃত্ব নির্বাচন করবে বলছেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক।

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা কালবেলা এর ওয়েবসাইটে ৫ মে ‘জনগণই সরকার ও নেতৃত্ব নির্বাচন করবে : সাইফুল হক’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

Screenshot comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগের পরিবর্তে কারা দেশ চালাবে তা দেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের সরকার ও নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর অন্যথা হবার সুযোগ নেই। কিন্তু কেউ যদি মনে করেন, তারা ছাড়া আর কেউ চালাতে পারবে না- সেটা গণতন্ত্র নয়।

অর্থাৎ, এই সংবাদেও সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতার শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

সংবাদ যাচাই ০৩

এখানে বলা হয়, চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চাইলেন সেই আ.লীগ নেতা। রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি করায় ডাক্তারকে বেধড়ক পেটানো সেই আওয়ামী লীগ নেতা এলিম পাহাড় এবার পা ধরে মাফ চেয়েছেন। রোববার (৫ মে) শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি ইকবাল হোসেন অপুর উপস্থিতিতে চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মাফ চাওয়ার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা কালবেলা এর ওয়েবসাইটে ৬ মে  ’চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চাইলেন সেই আ.লীগ নেতা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

Screenshot comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, এলিম পাহাড় শরীয়তপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভাপতি। ভুক্তভোগীরা হলেন, চিকিৎসক শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন ও তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান।

অর্থাৎ, এই সংবাদেও আলোচিত দাবি সম্পর্কিত কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

সংবাদ যাচাই ০৪

এখানে বলা হয়, মুন্সীগঞ্জে ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ওসি মো. মুজাহিদুল ইসলামসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা কালবেলা এর ওয়েবসাইটে ৬ মে ‘মুন্সীগঞ্জে ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

Screenshot comparison: Rumor Scanner

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, রোববার (৫ মে) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার আব্দুল বারেক। আব্দুল বারেক সিরাজদিখান উপজেলার বড়বর্তা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

অর্থাৎ, ভিডিও এই অংশেও আলোচিত দাবি বিষয়ক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

সংবাদ যাচাই ০৫

এখানে বলা হয়, কুয়াকাটায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে আহত ১১। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে নারী এবং শিশুসহ কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন।

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা কালবেলা এর ওয়েবসাইটে ৬ মে ‘কুয়াকাটায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে আহত ১১’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

Screenshot comparison: Rumor Scanner

অর্থাৎ, এই সংবাদেও প্রচারিত দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

সংবাদ যাচাই ০৬ 

এখানে বলা হয়, আমার গলার বড়শিটা আপনারাই খুলে নিয়েছেন, সংসদে লতিফ সিদ্দিকী। স্বতন্ত্র সদস্য সংসদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, যাদের গলায় বড়শি লাগানো আছে, তারা কথা বলবে না। আমিও বলিনি। ৬০ বছর আমি বলিনি। আজকে আমার গলা থেকে আপনারাই বড়শিটা খুলে দিয়েছেন। তাই আমি যতক্ষণ আছি, আপনি যতই বাধা দেন আমি কথা বলতে চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে যে সংবাদের স্ক্রিনশট দেখানো হয়েছে তা কালবেলা এর ওয়েবসাইটে ৫ মে Desh tv এর ওয়েবসেইটে ‘আমার গলার বড়শিটা আপনারাই খুলে নিয়েছেন, সংসদে লতিফ সিদ্দিকী’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

Screenshot comparison: Rumor Scanner 

অর্থাৎ, এই প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি।

উল্লেখ্য, আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সশরীরে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। গত ২ মে থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। আলোচিত ভিডিওটি প্রচারিত হওয়ার দিন মে এবং ,,(অধিবেশন চলমান) মে প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে ছিলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে মে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে দেখা যায় ।

এছাড়া, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ও একজন মন্ত্রীকে গ্রেফতারের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সেটি অবশ্যই দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ঢালাওভাবে প্রচার হওয়ার কথা। তবে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।

মূলত,  Desh tv 71 নামে একটি চ্যানেল থেকে প্রচারিত একটি ভিডিওর থাম্বনেইলে ‘সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী ও কাদের গ্রেপ্তার’ দাবিতে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো ঘটনা দেশে ঘটেনি। ১০ মিনিট ২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন যে সংবাদগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে তার কোথাও সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারের দাবি সম্পর্কিত সংবাদ উপস্থাপন করা হয়নি। এমনকি ভিডিওটিতে আলোচিত দাবির সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্যেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, সেনাপ্রধানের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গ্রেপ্তার শীর্ষক দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img