বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের মালিকানায় ভারতীয় কেউ নেই  

বেশ কিছুদিন যাবতই বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি সামাজিক আন্দোলন চলমান রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিবহন কোম্পানি শ্যামলী পরিবহন ভারতীয় প্রোডাক্ট দাবি করে এই পরিবহন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে একাধিক পোস্ট ফেসবুকে দেখা গেছে।   

শ্যামলী পরিবহ

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহন (এন আর ট্রাভেলস) ভারতীয় কোম্পানির পরিবহন নয় বরং একই নামে ভারতে একটি পরিবহন কোম্পানি থাকলেও বাংলাদেশ এবং ভারতের শ্যামলী পরিবহনের মালিকানা ভিন্ন। 

শ্যামলী পরিবহনের মালিকানার বিষয়ে অনুসন্ধানে শ্যামলী পরিবহনের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, রমেশ চন্দ্র ঘোষ ১৯৭৩ সালে পাবনা জেলা থেকে শ্যামলী পরিবহন এর যাত্রা শুরু করেন৷ বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা-কোলকাতা-ঢাকা আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস চালু করে। 

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১০ আগস্ট “পরিবহন খাতে শীর্ষ নাম শ্যামলী / একটি টেম্পো দিয়ে যাত্রা শুরু” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

উক্ত প্রতিবেদনে শ্যামলী পরিবহন সম্পর্কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভংকর ঘোষ জানান, তার বাবা রমেন্দ্র নাথ ঘোষ এবং চাচা রমেশ চন্দ্র ঘোষের মাধ্যমেই যাত্রা শুরু হয় শ্যামলী পরিবহনের। তিনি আরও বলেন, ‘শুরুটা হয়েছিলো টেম্পো। তার বাবা নিজেই চালাতেন সেই টেম্পু। পাবনা-কুষ্ঠিয়া রুটে চলতো সেই টেম্পো। কঠোর পরিশ্রমে ধীরে ধীরে তা পঞ্চাশে রূপান্তর হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে তার বাবা একটি বাস কিনে ব্যবসার গতি বাড়ান এবং নাম দেন শ্যামলী। পরিবারের অন্যরাও এতে যুক্ত হয়। এভাবেই শ্যামলী পরিবহনের যাত্রা।’

অর্থাৎ শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস বাংলাদেশি কোম্পানির পরিবহন। 

আমাদের অনুসন্ধানে একই নামে ভারতে শ্যামলী পরিবহনের আরও একটি কোম্পানির লিংকড-ইন প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে নাম একই হলেও ভারতের শ্যামলী পরিবহন লিমিটেড এর মালিক ভিন্ন এক ব্যাক্তি। উক্ত পরিবহন কোম্পানির লিংকড-ইন প্রোফাইল থেকে জানা যায়,অরুন কুমার ঘোষ নামক এক ভারতীয় ব্যাক্তির উদ্যোগে শ্যামলী পরিবহন লিমিটেড এর যাত্রা শুরু হয়। 

এছাড়া, ‘The Untold Stories of Bus Operator’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর “God gave me the power to serve passenger- Mr Arun Kumar Ghosh, Shyamoli Paribahan” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot : YouTube Channel 

উক্ত ভিডিওতে ভারতের শ্যামলী পরিবহন লিমিটেড এর মালিক অরুন কুমার ঘোষকে তার কোম্পানির যাত্রা সম্পর্কে কথা বলতে দেখা যায়।

তাছাড়া, ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ‘THE ECONOMICS TIMES’ এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, শ্যামলী পরিবহন একটি বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির বর্তমান বোর্ড সদস্য ও পরিচালকরা হলেন অরুন কুমার ঘোষ ও শিবানী ঘোষ। 

অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং ভারতের শ্যামলী পরিবহন নামে একই কোম্পানি থাকলেও এদের মালিকানা পুরোপুরি ভিন্ন ব্যক্তির।  

মূলত, সম্প্রতি দেশব্যাপী ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বানের অংশ হিসেবে “শ্যামলী পরিবহন ভারতীয় প্রোডাক্ট, তাই আমরা এই পরিবহন বর্জন করি” শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহনের মালিকানায় রয়েছে পাবনার রমেশ চন্দ্র ঘোষ পরিবার। শ্যামলী নামে একটি পরিবহন কোম্পানি ভারতে চালু থাকলেও বাংলাদেশ ও ভারতের কোম্পানি দুইটি ভিন্ন মালিকানার।

সুতরাং, বাংলাদেশের শ্যামলী পরিবহন  ভারতীয় কোম্পানি দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে ; যা বিভ্রান্তিকর।  

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img