কালবেলা’র নকল ফটোকার্ডে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে আইনমন্ত্রী’র নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

সম্প্রতি, “বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই। বাধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি চাননা বলেই আমরা সরাসরি বলতে পারছি না।” শীর্ষক তথ্য বা শিরোনামে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের ছবিসহ জাতীয় দৈনিক কালবেলা’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

কালবেলা

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই। বাধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি চাননা বলেই আমরা সরাসরি বলতে পারছি না।’ বলে কোনো মন্তব্য করেননি এবং দৈনিক কালবেলাও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে কালবেলা’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩।

Screenshot from Facebook

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং কালবেলা’র লোগোর সূত্র ধরে কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৩০ সেপ্টেম্বরে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও কালবেলা’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিতে প্রচারিত কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

তবে একই দিনে কালবেলা’র ফেসবুক পেজে “খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কবে জানালেন আইনমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় এবং এর কমেন্টে একই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Facebook

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘আমরা আগামীকাল (১ অক্টোবর) মতামত দিয়ে ফাইল ছেড়ে দেব।’ বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

অর্থাৎ, কালবেলা’র ফেসবুক পেজে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ফটোকার্ডটির শিরোনাম ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তাতে ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই। বাধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি চাননা বলেই আমরা সরাসরি বলতে পারছি না’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

Photocard Comparison by Rumor Scanner

এছাড়া, একই প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি মন্তব্য পাওয়া যায়। গত ৪ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘শর্ত অনুসারে বেগম খালেদা জিয়া কোনোভাবেই বিদেশে যেতে পারবেন না। আইনে সেই সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা সেই ক্ষমতাও আর ব্যবহারের সুযোগ নেই। এখন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। যে কারণে বেগম জিয়া দণ্ডিত, সেই দোষ স্বীকার করেই ক্ষমা চাইতে হবে। আর যে কেউ তার সাজা মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারেন।’

মূলত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সাংবাদিকদের ‘আমরা আগামীকাল (১ অক্টোবর) মতামত দিয়ে ফাইল ছেড়ে দেব।’ শীর্ষক বক্তব্য দেন। এরই প্রেক্ষিতে দৈনিক কালবেলা’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কবে জানালেন আইনমন্ত্রী’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডের শিরোনাম বিকৃতের মাধ্যমে ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই। বাধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি চাননা বলেই আমরা সরাসরি বলতে পারছি না।’ শীর্ষক শিরোনামে কালবেলা’র ফটোকার্ড দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কনভেনশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়া বলেছেন বিদেশে চিকিৎসা নিতে তিনি কোনো শর্ত মানবেন না।

উল্লেখ্য, পূর্বেও কালবেলার আসল ফটোকার্ডকে বিকৃত করে ইন্টারনেটে প্রচার করলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে:

সুতরাং, মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলাকে উদ্ধৃত করে ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে আইনে বাধা নেই। বাধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি চাননা বলেই আমরা সরাসরি বলতে পারছি না।’ শীর্ষক মন্তব্যকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img