২ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এনসিপির অগ্নিসংযোগ দাবিতে ২০২৪ সালের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি, ‘বিকেলে রাজধানীতে মিছিল করে জাতীয় পার্টি-আর সন্ধ্যায় কাকরাইল জাতীয় পার্টির অফিসে আ’গুন দেয় এনসিপি…!’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, দাবি করা হচ্ছে গত ২ আগস্ট বিকেলে জাতীয় পার্টি রাজধানীতে মিছিল করে, আর সন্ধ্যায় কাকরাইলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গতকাল ২ আগস্টের (শনিবার) নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি। এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Comrade Mahmud- কমরেড মাহমুদ’ নামের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর ‘আজ ছাত্র জনতার উপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় অফিসে আগুন…’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

একই তারিখে একই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রচার হতে দেখা যায়। দেখুন – এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

উক্ত পোস্টগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর ওয়েবসাইট (,,) ও ইউটিউব চ্যানেলে (,,) সেই সময় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০৪ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। তবে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন দুই পক্ষই। জাতীয় পার্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে যাওয়া ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, তাঁদের ওপর আগে হামলা করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

ডেইলি স্টার -এর বাংলা ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি ​​অফিসার রাশেদ বিন খালেদ ডেইলি স্টারকে জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে (২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর) তারা কল পান এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নেভাতে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেঈমান জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার জাতীয় বেঈমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’

বাংলা ট্রিবিউন -এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা। সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য এলাকায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার’ ব্যানারে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে জাপাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দেওয়ার পর কার্যালয় ঘেরাও করতে কাকরাইলের বিজয়নগর এলাকায় আসেন তারা। এসময় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে গত ২ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগুন দিয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img