মব তৈরি এবং লুটপাটের দায়ে সেনাপ্রধানের নির্দেশে সারজিস ও হাসনাতকে গ্রেফতারের দাবিটি ভুয়া

মব সৃষ্টি এবং লুটপাটের দায়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নির্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে দাবি সম্বলিত থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত ভিডিওটি প্রায় ১০ লাখ ৪১ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০টি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়েছে।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মব সৃষ্টি কিংবা লুটপাটের দায়ে সেনাপ্রধানের নির্দেশে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল এবং শিরোনাম ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে প্রযুক্তির সাহায্যে যুক্ত করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে ভিডিওটির থাম্বনেইল এবং শিরোনামে মবের সৃষ্টির কারণে সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহকে গ্রেফতারের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও মূল ভিডিওর কোথাও এ বিষয়ক কোনো তথ্য প্রদান করা হয়নি কিংবা আলোচনা করা হয়নি। ভিডিওটির শুরুতে একজন সংবাদপাঠকের ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে তাকে‘মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই। রংপুরে এনসিপি নেতা সারজিসকে এসব কথা বলেছেন সেনা কর্মকর্তারা।’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার একটি ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে একজন সেনা কর্মকর্তাকে সারজিস আলমের সাথে মব বিষয়ক আলোচনা করতে দেখা যায়। এরপর ভিডিওতে বেশ কয়েকটি অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও দেখানো হয়। যার সাথে দাবির কোনো যোগসূত্র নেই।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওটির শুরুতে থাকা সংবাদপাঠকের ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে উক্ত ফুটেজের কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম NEWS24 এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জুন ম’বে’র নামে না’শ’ক’তার সুযোগ নেই, সারজিস আলমকে সেনা কর্মকর্তা | NCP | NEWS24 শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত প্রতিবেদনের শুরুর সংবাদপাঠকের ফুটেজের সাথে আলোচিত ভিডিওর শুরুর অংশের হুবহু মিল রয়েছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রংপুরে অবস্থিত জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গত ১ জুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী। ওই সময় সেখানে ছুটে যান এনসিপির নেতা সারজিস আলম। এসময় তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সাথে দেখা করেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়। তবে প্রতিবেদনের কোথাও সারজিস আলমকে আটকের কথা বলা হয়নি। বরং প্রতিবেদনে তাকে সেনা কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের পর গণমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়।

ভিডিও যাচাই ২

আলোচিত ভিডিওটিতে পরবর্তীতে একই ঘটনায় সারজিস আলমের সেনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলার একটি ফুটেজ দেখানো হয়। উক্ত ফুটেজের বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রির্ভাস ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আরেক গণমাধ্যম Porikroma News-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১ জুন রংপুরে সারজিস আলমের সাথে কথা বলছেন সেনাবাহিনী | News | Porikroma News শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner

যেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমকে রংপুরের ঘটনায় সারজিস আলমকে মব বিষয়ক বিভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়।

পরবর্তীতে, মব তৈরিতে ভূমিকা রাখার দায়ে সারজিস আলম বা হাসনাত আবদুল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবির প্রেক্ষিতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং আলোচিত দাবি প্রচারের একদিন পর অর্থাৎ, ৩ জুন সারজিস আলমকে ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা শেষে গণমাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে দেখা যায়। পাশাপাশি ৬ জুন হাসনাত আবদুল্লাহকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা যায়।

সুতরাং, মব সৃষ্টি এবং লুটপাটের দায়ে সেনাপ্রধানের নির্দেশে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img