বৃহস্পতিবার, মে 22, 2025

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা হয়নি, সালমান এফ রহমান ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকও নিহত হননি

সম্প্রতি, ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিআইপি সেলে ভয়াবহ হামলা: নিহত সালমান এফ রহমান ও সাবেক বিচারপতি মানিক মিয়া’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা কারাগারে হামলা কিংবা সালমান এফ রহমান ও বিচারপতি মানিক মিয়া নিহতের দাবি সঠিক নয় বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের উক্ত দাবির কতিপয় পোস্টগুলোতে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। লিংকটিতে প্রবেশ করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিআইপি সেলে ভয়াবহ হামলা: নিহত সালমান এফ রহমান ও সাবেক বিচারপতি মানিক মিয়া’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখা  যায়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ‘১৩ এপ্রিল ২০২৫’ উল্লেখ রয়েছে।

কথিত প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, রাজধানীর কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিআইপি সেলে আজ রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও অভূতপূর্ব ঘটনা। বন্দিদের ভেতরের একটি সংঘর্ষ হঠাৎই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যার ফলে নিহত হয়েছেন দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি—প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রখ্যাত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান এবং সাবেক বিচারপতি মানিক মিয়া। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনার শুরু হয় হঠাৎই কোনো পূর্ব সংকেত ছাড়াই। ভিআইপি ব্লকের ভেতর থেকে চিৎকার, ধাক্কাধাক্কি ও সহিংস আচরণের শব্দ শোনা যায়। কারা রক্ষীরা দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় দুই বন্দি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তৎক্ষণাৎ তাদের কারা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

দাবি করা হয়, কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত চলছে। নিহতদের পরিচয় নিয়েও দোটানা থাকলেও বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমান এবং সাবেক বিচারপতি মানিক মিয়া। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা নিছক কোনো হঠাৎ ঘটনা নয়। এটি হতে পারে গভীরভাবে পরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, যার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ কিংবা প্রতিশোধের মনোভাব। নিহত দুই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন এবং সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও জানা যায়।

আরও দাবি করা হয়, এ ঘটনার পর কারা ফটকের সামনে ভিড় করেন নিহতদের স্বজন ও মিডিয়ার প্রতিনিধি। কিন্তু রাত ১১টা পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি কিংবা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। দেশের ইতিহাসে কারাগারের ভেতরে এই ধরণের ভিআইপি বন্দি হত্যা নজিরবিহীন। সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনি রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপরও উঠেছে বড় প্রশ্ন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়। এ ঘটনায় কারা মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সর্বশেষ বলা হয়,  এই হামলা শুধু দুটি প্রাণ নয়, নড়বড়ে করে দিয়েছে দেশের কারা নিরাপত্তা, বিচার ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি। এখন সারা দেশের মানুষ অপেক্ষায়—আসলে কী ঘটেছিল সেই রাতে, এবং কে বা কারা এর পেছনে ছিল।

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে কথিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা ‘sadhinnews247’ নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূঁইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়।

স্বাভাবিকভাবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা বা বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ কিংবা সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান ও সাবেক বিচারপতি মানিক নিহত হলে তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হবার কথা। কিন্তু গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্যসূত্রে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ১২ এপ্রিল ‘কেরানীগঞ্জ কারাগারে ভিআইপি জোনে হামলার খবর বিভ্রান্তিমূলক: কারা অধিদপ্তর’ শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে কারা অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে বলা হয়, কেরানীগঞ্জ কারাগারে ভিআইপি জোনে হামলা বা এ ধরনের কোনো ঘটনা কেরানীগঞ্জসহ দেশের কোনো কারাগারে ঘটেনি। 

সুতরাং, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা এবং সালমান এফ রহমান ও  শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নিহত হওয়ার তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img