সম্প্রতি, হবিগঞ্জ-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি এবিষয়ে ফেসবুকে প্রচারিত সর্বাধিক ভাইরাল ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার বার। ভিডিওটিতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভিডিওটিতে নেটিজেনরা মন্তব্য করেছেন প্রায় দেড় হাজার। ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৪ শত বার। ভিডিওটি’র মন্তব্য ঘর ঘুরে অধিকাংশ নেটিজেনকে উক্ত দাবির পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেননি এবং সাকিব আল হাসানও কারাগারে যাননি বরং ভিন্ন একটি মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমনের কথা বলার পুরোনো ভিডিও’র সাথে কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে তাতে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে শোনা যায়, এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। আদালত তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উনি আট বছর জেলে থাকবেন, ১৫ লক্ষ টাকা ফাইন (জরিমানা) দিবেন এবং আনাদায়ে আরও এক বছর জেলে থাকবেন।”
উক্ত ভিডিওটি’’ সংবাদপাঠ অংশে বলা হয়, ব্যারিস্টার সুমনের মামলায় সাকিব আল হাসানের ২ বছরের জেল হয়েছে। তবে সেখানে এবিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
বিষয়টি’র সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ভিডিওটি থেকে কিছু স্থিরচিত্র নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ২৪’ এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর “এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’: ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সেসময় ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘রায়ে আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায় বাংলাদেশের সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’। বিভিন্ন থানায় বসে যে সব ওসিরা নিজেদের জমিদার মনে করেন, তাদের জন্য এ রায় ‘অশনি সংকেত’ হয়ে থাকবে। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে।’
এই ভিডিওটি’র সাথে আলোচিত ভিডিওটি’র ব্যারিস্টার সুমনের বক্তব্যের অংশের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এটি সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সুমনের করা কোনো মামলা বিষয়ক বক্তব্যের ভিডিও নয়।
পাশাপাশি, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার সুমন কর্তৃক মামলা করার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সাকিব আল হাসানের কারাগারে যাওয়ার দাবিটিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তবে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করে সাকিবের বিরুদ্ধে তার (সুমন) ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ করেন। তবে উক্ত ঘটনায় সেসময় বা পরবর্তীতে কোনো ধরনের মামলা করা হয়নি।
তাছাড়া, গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী সময়েও এই দুই ব্যক্তির প্রকাশ্যে বিবাদে জড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও, মাগুরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি রাতে তিনি চোখের চিকিৎসা করাতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
মূলত, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসানের দুবাইয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্য হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যাওয়ার বিষয়ের সমালোচনা করেন এবং ভিডিও বার্তার কিছুদিন পূর্বে সাকিবের বিরুদ্ধে তাকে হামলা চেষ্টা করার ক অভিযোগ করেন। পরবর্তী উক্ত বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হলে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ব্যবহার করে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা করেননি এবং সাকিব আল হাসানও কখনো কোনো কারাগারে যাননি। বর্তমানে তিনি চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও ব্যারিস্টার সুমন এবং সাকিব আল হাসানের বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের করা মামলায় সাকিব আল হাসান কারাগারে গিয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Channel 24 YouTube: এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা ‘অশনি সংকেত’: ব্যারিস্টার সুমন
- Barrister Syed Sayedul Haque Suman: সাকিব আল হাসান একজন সেলেব্রিটি হওয়ায় তার অপরাধের কি বিচার হবে না?
- Ittefaq: চোখের চিকিৎসা করাতে রাতে লন্ডন যাচ্ছেন সাকিব
- Rumor Scanner’s Own Analysis