রংপুরে মুসলমান কর্তৃক হিন্দু মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি বানোয়াট

Bangladesh: Another Hindu girl named Jayanthi Burman Koli was tortured and killed by Muslims. The incident happened in Rangpur.Hindus are being tortured every day in BD and Hindu girls are being targeted first. The whole of Bangladesh is planning to ethnically cleansed the Hindus” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি দাবি সামাজিক মাধ্যম টুইটারে প্রচার করা হয়েছে। 

Screenshot from Twitter | International Hindu Voice 

যা দাবি করা হচ্ছে

“রংপুরে জয়ত্রী বর্মন কলি নামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেয়েকে মুসলমানরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হিন্দুদের নির্যাতন করা হচ্ছে এবং প্রথমে হিন্দু মেয়েদের টার্গেট করে সমগ্র বাংলাদেশে হিন্দুদের জাতিগতভাবে নির্মূল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

‘International Hindu Voice’ নামের টুইটার একাউন্ট থেকে প্রচারিত টুইটটি দেখুন এখানে
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জয়ত্রী বর্মন কলি নামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেয়েকে মুসলমানরা নির্যাতন করে হত্যা করেনি বরং জয়ত্রী বর্মন কলি আত্মহত্যা করেছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। 

অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ‘Goutam Halder Pranto’ নামের একটি ফেসবুক একাউন্টে গত ০৩ মার্চ “এখন সন্তানের জন্য বুকফাটা আর্তনাদ” শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত পোস্টে একই ছবির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Facebook | Goutam Halder Pranto 

উক্ত ফেসবুক পোস্টটিতে, ‘জয়ত্রী বর্মন কলি’ রংপু‌রের পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ‘তারক চন্দ্র বর্মন’ এর বড় মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

‘Goutam Halder Pranto’ নামের ফেসবুক একাউন্টে থাকা তথ্যের সূত্র ধরে ‘পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়’ এর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জনাব ‘তারক চন্দ্র বর্মন’ এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

প্রতিত্তোরে তিনি জানান,

“জয়ত্রী সুইসাইড করেছে। টেবিলে থাকা সুইসাইড নোটে জয়ত্রী লিখেছিলো, ‘বাবা-মা আমাকে ক্ষমা করে দিও, আমি তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না, আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা।’

প্রাথমিকভাবে জয়ত্রী’র আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে তারক চন্দ্র বর্মন বলেন, ওর (জয়ত্রী’র) পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে বাসা থেকে শাসন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে টেবিলে একটা চিঠি লিখে সে আত্মহত্যা করে। তবে, আত্মহত্যার পূর্বে তার চলাফেরা এবং আচার–আচরণ স্বাভাবিক ছিলো বলেও জানান তিনি। 

এছাড়া, মুসলিম ছেলের সঙ্গে জয়ত্রী’র কোনো সম্পর্ক ছিলো কিনা, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ সম্পর্কে আমরা পরিবারের কেউ অবগত ছিলাম না পূর্বে। তবে, জয়ত্রী আত্মহত্যা করেছে এবং এটি তার রেজাল্ট সংক্রান্ত ব্যাপারে, এতটুকুই বলার ছিলো আমার।” 

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চে জয়ত্রী কলি বর্মনের মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো সংবাদ দেশীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে খুঁজে না পাওয়া গেলেও তার পারিবারিক সূত্রে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জয়ত্রী কলি বর্মন আত্মহত্যা করেছে, তাকে মুসলমানরা নির্যাতন করে হত্যা করেনি। 

মূলত, চলতি বছরের ০১ মার্চ তারিখে রংপু‌রের পায়রাবন্দ সরকারি বেগম রোকেয়া স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক জনাব ‘তারক চন্দ্র বর্মন’ এর বড় মেয়ে ‘জয়ত্রী বর্মন কলি’ আত্মহত্যা করে। পরবর্তীতে জয়ত্রী’র মৃত্যু নিয়ে International Hindu Voice নামের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে জয়ত্রী বর্মন কলিকে মুসলমানরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে শীর্ষক দাবিতে প্রচার করেছে। তবে, আত্মহত্যার প্রাথমিক কারণ হিসেবে পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না করতে পারায় বিষয়টি রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেছে জয়ত্রী’র বাবা তারক চন্দ্র বর্মন। 

উল্লেখ্য, কিছুদিন পূর্বে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে এক মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটন ঘটেছে। প্রীতি নামের ঐ মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে ‘মেয়েটি হিন্দু হওয়া সত্তেও মুসলমান ছেলেকে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং মুসলমান ছেলে কর্তৃক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে’ শীর্ষক একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছিলো। সে সময়ে বিষয়টিকে মিথ্যা হিসেবে শনাক্ত করে বিস্তারিত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। 

সুতরাং, রংপুরের জয়ত্রী বর্মন কলি নামের এক শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে না পারায় আত্মহত্যা করার বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে জয়ত্রী বর্মন কলিকে মুসলমানরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে শীর্ষক দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Statement: তারক চন্দ্র বর্মন (জয়ত্রী বর্মন কলি’র বাবা) 
  • Rumor Scanner’s own analysis. 

আরও পড়ুন

spot_img