ফটিকছড়ির দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ব্যবহার করে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভুয়া দাবি

সম্প্রতি, ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ুয়া এলাকায় চারটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে জামাত-শিবিরের কর্মীরা অগ্নিসংযোগ করেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ফটিকছড়িতে নানুপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ুয়াপাড়ায় চার হিন্দু পরিবারের বাড়িতে জামাত-শিবিরের কর্মীরা অগ্নিসংযোগ করেনি।  প্রকৃতপক্ষে, ওই এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনাজনিত অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ব্যবহার করে আলোচিত দাবিটি ছড়ানো হয়েছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হিন্দু নয়, বরং সবাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বলে পরিবারের এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।

দাবিকৃত ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Nikash Barua’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সম্প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিলে যায়।

লাইভ ভিডিওতে ক্যামেরার পেছনে থাকা ব্যক্তি জানান, নানুপুর পশ্চিম বড়ুয়াপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেননি।

এই ভিডিওটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০ ফেব্রুয়ারি মূলধারার সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম নানুপুর গ্রামের বড়ুয়াপাড়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের বসতঘর সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে নানুপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলমের বরাতে জানানো হয়, অগ্নিকাণ্ডে নিলু বড়ুয়া, দিলীপ বড়ুয়া, দীপঙ্কর বড়ুয়া ও আদেশ বড়ুয়ার সেমি-পাকা বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে এবং পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

তবে, প্রতিবেদনে কোথাও ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ বা শত্রুতার জেরে আগুন লাগানোর কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত অফিসার কামাল উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, অগ্নিকাণ্ডটি শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটেছে। যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়িই কাঁচা ছিল, তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকেও অগ্নিসংযোগের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।


অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিলু বড়ুয়ার বড় ছেলে রূপণ বড়ুয়া রিউমর স্ক্যানারকে জানান, আগুনের সূত্রপাত তাদের বাড়ি থেকেই হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, এটি শর্ট সার্কিটের কারণে লেগেছে। তিনি নিশ্চিত করেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই এবং কেউ পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়নি।

একই কথা জানান ক্ষতিগ্রস্ত আদেশ বড়ুয়াও।

অন্যদিকে দিলীপ বড়ুয়া জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চার পরিবারই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিনি বলেন, আশপাশে কোনো হিন্দু পরিবার নেই, এলাকাটির নামই বড়ুয়াপাড়া।

সুতরাং, ফটিকছড়িতে চার হিন্দু পরিবারের বাড়িতে জামাত-শিবিরের কর্মীরা অগ্নিসংযোগ করেছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি  মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img