বিএনপি নেতা আমীর খসরুর কথিত ফোনালাপের অডিওটি কোটা আন্দোলনের নয়  

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘাত ও সহিংসতার মধ্যেই সম্প্রতি “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সাথে ‘নওমি’ নামে এক শিক্ষার্থীর ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, যেখানে আমীর খসরুকে উক্ত শিক্ষার্থীর প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা দিতে শোনা গিয়েছে” শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এ সংক্রান্ত ভিডিওর ক্যাপশনে কথিত এই ফোনালাপকে কোটা আন্দোলন অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ের বলে দাবি করা হচ্ছে। 

ফোনালাপের

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) ও এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

গত ২৬ জুলাই গণমাধ্যমের সংবাদের বরাতে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত উক্ত ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি সত্য মনে করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সম্পৃক্ততা নিয়ে মন্তব্য করেন। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে নওমি নামে কারো সাথে ফোনালাপের দাবিতে প্রচারিত অডিও ক্লিপটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ইন্টারনেটে ২০১৮ সাল থেকে কথিত এই ফোনালাপটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে চ্যানেল আই’র ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আমির খসরুর ফোনালাপ ফাঁস’ শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। একইদিন চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলেও একই ফোনালাপের অডিও প্রচার করা হয়। 

Screenshot: Youtube

এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের মধ্যে আমীর খসরুর মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কুমিল্লায় অবস্থানরত তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মিলহানুর রহমান নাওমীর টেলিফোনে একটি কথোপকথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমীর খসরু ওই ছাত্রদল নেতাকে আন্দোলনে নেমে পড়তে বলেছিলেন। চ্যানেল আইয়ের সংবাদে অবশ্য উক্ত শিক্ষার্থীর নাম মামুন বলে উল্লেখ করা হয়। 

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট দুইজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় এ বিষয়ে মামলা দায়েরের পর পরদিন নাওমীকে আটক করা হয়। একই মামলায় সে বছরের ২১ অক্টোবর উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে আমীর খসরু নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের দিন আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। পরের বছরের ১২ই জুন এই মামলার বিচারকাজ পুনরায় শুরু হওয়ার পর এ বিষয়ে এখনও কোনো রায় আসেনি। 

মূলত, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও কুমিল্লার ছাত্রদল নেতা মিলহানুর রহমান নাওমীর মধ্যকার ফোনালাপ দাবিতে একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। সম্প্রতি, উক্ত ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি প্রচার করে দাবি করা হয় আমীর খসরু চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আন্দোলনের সমন্বয় নওমির সাথে কথা বলছেন। 

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ৮ই জুলাই এই আন্দোলনের সমন্বয়ক দলের একটি তালিকায় মিলহানুর রহমান নামে কাউকে পাওয়া গেল না।

সুতরাং, বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে নওমি নামে এক ব্যক্তির সাথে ফোনালাপ শীর্ষক দাবিতে ২০১৮ সালের একটি কথিত অডিও ক্লিপ প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img