উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের জাতীয়তা নিয়ে ভুয়া তথ্য

সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মায়ানমারের নাগরিক এবং তার এদেশে কোনো পূর্ব পুরুষের বংশ পরম্পরায় নেই দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত আরেকটি আরেকটি ভিডিওতে (আর্কাইভ) ভারতীয় ইন্টিলিজেন্স এর বরাতে বলা হয় মাহফুজ আলম ২০১৬ সালে ১ জুলাই হোলি আর্টিজানে হামলার সদস্য ছিলেন। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহফুজ আলম মায়ানমারের নাগরিক নন বরং তিনি বাংলাদেশি। এছাড়া ২০১৬ সালের জুলাই মাসে হোলি আর্টিজানে হামলার সাথে মাহফুজের কোনো যোগসূত্র নেই।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক কালবেলার ওয়েবসাইটে গত ১০ নভেম্বর “উপদেষ্টা পরিষদে ডাক পাওয়া মাহফুজ আলমের পরিচয়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাহফুজ আলম পৈত্রিক বাড়ি লক্ষ্মীপুর উপজেলার রামগঞ্জ উপজেলার ইসাপুর গ্রামে। 

অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ২৪ এর এক প্রতিবেদন থেকে একই তথ্য জনা যায়। 

অনলাইনে বই বিক্রির প্রতিষ্ঠান রকমারির ওয়েবসাইটে মাহফুজের লেখক প্রোফাইলে  থাকা বইয়ের লেখক পরিচিতি থেকে জানা যাচ্ছে, মাহফুজের জন্ম লক্ষ্মীপুরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এই পরিচিতিতে তার একটি বইয়ের (প্রথম খন্ড) তথ্যই উল্লেখ রয়েছে।

Screenshot: Rokomari

জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকা বিষয়টি নিয়ে মাহফুজের এলাকায় সরেজমিনে অনুসন্ধান করেও একই তথ্য পেয়েছে।

এছাড়া উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটির থাম্বনেইলে থাকা ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ভিন্ন ব্যক্তির ছবিতে মাহফুজ আলমের মুখমণ্ডল সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে ভারতীয় ইন্টিলিজেন্স মাহফুজ আলমকে নিয়ে আলোচিত দাবিতে কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করার প্রমাণ মেলেনি। ভারতের গণমাধ্যমগুলোতেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

২০১৬ সালে ১ জুলাই রাজধানীর গুলশান এলাকায় হোলি আর্টিজানে হামলার সদস্য ছিলেন কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে ১ জুলাই ঢাকা গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার মূল পরিকল্পনা করেছে তামিম চৌধুরী, যিনি কয়েক বছর আগে নারায়নগঞ্জে এক অভিযানে নিহত হন।

তামিম চৌধুরী ছাড়াও জঙ্গিবিরোধী অন্য অভিযানগুলোতে নিহত হন মারজান, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান, তানভীর কাদেরী, তারেক রায়হান এবং ছোটো রায়হান।

হোলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, সামিউল মোবাশ্বির, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং নিবরাস ইসলাম নিহত হন।

এছাড়া উক্ত ঘটনার পর আটক হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালিদ নামক ব্যক্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড পান। 

তবে উক্ত প্রতিবেদনসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অন্য কোনো গণমাধ্যমে মাহফুজ আলমের হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আফগান ট্রেনিংপ্রাপ্ত মায়ানমারের নাগরিক দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img