স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খানকে জড়িয়ে প্রথম আলোর নামে ভুয়া ফটোকার্ড প্রচার

গত বছরের ১৪ অক্টোবর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান। সম্প্রতি তার নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়, যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ ফেরত চাওয়ার হয়। 

এর প্রেক্ষিতে ফারুক খানের ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মুখ খোলার শার্টে ফারুক খানকে জেলখানায় বসে ফেসবুক চালানোর সুযোগ দিয়েছি আমরা’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে দৈনিক প্রথম আলো’-র লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ফটোকার্ড দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফারুক খানের কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মুখ খোলার শার্টে ফারুক খানকে জেলখানায় বসে ফেসবুক চালানোর সুযোগ দিয়েছি আমরা’ শীর্ষক মন্তব্য করেননি। এছাড়াও প্রথমআলোও উক্ত মন্তব্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথম আলোর ব্যবহার করে আলোচিত ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে প্রথম আলোর লোগো এবং এটি প্রকাশের দিন হিসেবে ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ উল্লেখ করা হয়েছে।

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত ওইদিন প্রচারিত এমন কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটোকার্ডটিতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটিকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ ‍হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলোচিত ফটোকার্ডের তথ্য এবং কার্ড উভয়-ই ভুয়া। প্রথম আলো এটি প্রকাশ করেনি। 

Screenshot: Facebook

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ফারুক খানের পোস্টটি নিয়ে আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন কিনা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধানেও গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ফারুক খানের পোস্টটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সংক্রান্ত তথ্য জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ০৪ ফেব্রুয়ারি ফারুক খানের ফেসবুক পোস্টটি কারাগার থেকে দেওয়া সম্ভব নয়: কারা কর্তৃপক্ষ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Prothom Alo 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের ফেসবুক পোস্টটি কারাগার থেকে দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে এক বিবৃতি প্রদান করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে কারাগারে থেকে এ ধরনের প্রচার বা ফেসবুক চালানো সম্ভব নয়। ফারুক খান বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে বন্দী রয়েছেন। কারাগারে আটক কোনো বন্দীর পক্ষে সেখানে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয়। Faruk Khan নামের ওই ফেসবুক আইডিটি তাঁর কোনো স্বজন বা কারাগারের বাইরে থাকা অন্য কেউ পরিচালনা করছে কি না, সে সম্পর্কে কারা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধও জানানো হয় বিবৃতিতে।

সুতরাং, ফারুক খানের ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মুখ খোলার শার্টে ফারুক খানকে জেলখানায় বসে ফেসবুক চালানোর সুযোগ দিয়েছি আমরা’ শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে দৈনিক প্রথম আলোর নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img