সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকে (টিআইবি) উদ্ধৃত করে দাবি করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিনে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১০০ দিনে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে শীর্ষক কোনো দাবি টিআইবি করেনি বরং কোনোপ্রকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই টিআইবির বরাতে এই তথ্যটি প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে “‘New Bangladesh’ Observations on the First 100 Days after the Fall of the Authoritarian Regime” শিরোনামে গত ১৮ নভেম্বরে প্রকাশিত টিআইবি এর একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়।
গবেষণাটি পড়ে জানা যায়, গবেষণাটির উদ্দেশ্য হলো বিগত সরকারের পতনের পরের ১০০ দিনের ঘটনাপ্রবাহ ও অংশীজনের ভূমিকা পর্যালোচনা করা৷ গবেষণাটিতে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবেশসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে, গত ১০০ দিনে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হওয়ার আলোচিত দাবিটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
গবেষণাটিতে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অর্থপাচার রোধের পর্যবেক্ষণে উক্ত দাবির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷ মন্তব্যে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও দুদকের কার্যক্রমের সমালোচনা- প্রতিষ্ঠানের ওপর রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব, সদিচ্ছার ঘাটতি, দুদকের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা। দুদকের চলমান অনুসন্ধান, তদন্ত, মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ, সংস্কারের আগেই দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্যোগের ফলে সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য টিআইবি এর ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানার টিমকে নিশ্চিত করেন যে গত ১০০ দিনে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে শীর্ষক কোনো দাবি টিআইবি করেনি।
অর্থ পাচারের বিষয়ে টিআইবির মন্তব্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ০২ নভেম্বর ঢাকার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে পাচার হওয়া অর্থ ও তা উদ্ধারের উপায় শীর্ষক সেমিনারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তি হওয়ার পরবর্তী সময়ে অর্থ পাচারের সংখ্যার বিষয়ে টিআইবি প্রদত্ত কোনো মন্তব্য বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, টিআইবি জানিয়েছে যে গত ১০০ দিনে ৩ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- TIB – ‘New Bangladesh’ Observations on the First 100 Days after the Fall of the Authoritarian Regime
- The Daily Star – আ. লীগ আমলে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: টিআইবি
- Statement of a TIB Officer of Dhaka Office
- Rumor Scanner’s own analysis