চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের নামে ভুয়া বক্তব্য প্রচার 

যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক পদে সাবেক কংগ্রেসওম্যান লেফটেন্যান্ট তুলসী গ্যাবার্ডকে মনোনয়নের পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ও পেশাগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে৷ অন্যদিকে, ইসকনের সাবেক নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত ২৫ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ উভয় ঘটনার প্রেক্ষিতে, সম্প্রতি ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বললেন-তুলসী গ্যাবার্ড’ শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে৷ 

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)৷

একই দাবিতে ভারতীয় অ্যাকাউন্টের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ড কোনো মন্তব্য করেননি বরং, তার প্রসঙ্গে ভিন্ন একটি আলোচনা থেকে তথ্য-প্রমাণহীন ও মনগড়া দাবিটি প্রচার করা হয়েছে৷ 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে ফেসবুক পোস্টগুলোর কমেন্টবক্স পর্যবেক্ষণ করে দাবিটির তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লিখিত ০৩ ডিসেম্বর তারিখে গণমাধ্যম সময় টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদন ও ০৪ ডিসেম্বর তারিখে বার্তা২৪ এর একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনগুলো যাচাই করে আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷ 

প্রতিবেদন দুইটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, গত ০৩ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে বলেন, “চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী বাংলাদেশে ইসকনের নেতা। এছাড়াও, ইউএস ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রস্তাবিত পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডও ইসকনের সদস্য। চিন্ময় দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে,কারাগারে রাখা হয়েছে এবং বাংলাদেশের কোনও আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে দাঁড়াতে রাজি নয়, কারণ তার আইনজীবীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা কি কোনও ব্যবস্থা নেবেন?” জবাবে দফতরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, “আমার কাছে এই মামলার বিস্তারিত তথ্য নেই। কিন্তু আবারও বলব, আমরা জোর দিয়ে যাচ্ছি, যারা অপরাধে অভিযুক্ত তাদেরও উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে দিতে হবে এবং মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে।”

উক্ত প্রতিবেদনগুলোতে কোথাও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের কোনো মন্তব্য উল্লেখ করা হয়নি৷

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত গত ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ এর প্রেস ব্রিফিংয়ের আর্টিকেলে বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশ্নোত্তর অংশটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত আর্টিকেলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের কোনো মন্তব্যের উল্লেখ নেই৷ 

তুলসী গ্যাবার্ড আসলেই এমন কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে তার ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক পেজওয়েবসাইট যাচাই করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে তার এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, বাংলাদেশের বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বা তার গ্রেফতার প্রসঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ড কোনো মন্তব্য করেছেন বলে সংবাদ তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে তুলসী গ্যাবার্ড মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img