চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে (চন্দন কুমার ধর) চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় গত ২৫ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গতকাল চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশের সাথে যোগ দেন একদল আইনজীবীও। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। তখন সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এরইমধ্যে ‘দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লী তে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইসকন নেতার’ শীর্ষক শিরোনামে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর ছবি যুক্ত করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি’র ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত ফটোকার্ডের সত্যতা জানতে চেয়ে একজন নেটিজেনের পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত পোস্টটিতে প্রায় ৫৯ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। পোস্টটিতে প্রায় ১৫ হাজারের অধিক বার মন্তব্য করা হয়েছে। পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে ৩ হাজারের অধিক বার।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লী তে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইসকন নেতার’ শীর্ষক দাবিতে সময় টিভি কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে উক্ত ফটোকার্ডটি তৈরি করে সময় টিভি’র নামে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিমে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে সময় টিভি’র লোগো ও এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ উল্লেখ করে হয়েছে।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে সময় টিভি’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ২৮ নভেম্বর ও এর আগে পরে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির অনুরূপ কোনো ফটোকার্ড কিংবা উক্ত তথ্য বা শিরোনাম সম্বলিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, সময় টিভি’র ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, সময় টিভি কর্তৃক নিয়মিত প্রকাশিত ফটোকার্ডের শিরোনামে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্য রয়েছে।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে সময় টিভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমটি জানায়, সময় টিভি এমন কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। আলোচিত ফটোকার্ডটি ভুয়া।
অর্থাৎ, আলোচিত ফটোকার্ডটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভি প্রকাশ করেনি।
পাশাপাশি, সময় টিভি ব্যতীত অন্যান্য গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবি সমর্থিত কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, ‘দৌলতদিয়া নিষিদ্ধ পল্লী তে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ইসকন নেতার’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভি’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি ভুয়া ও বানোয়াট।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV: Facebook Page
- Somoy TV: Website
- Somoy TV: YouTube Channel
- Statement from Somoy TV
- Rumor Scanner’s Own Analysis