সম্প্রতি, ডিবিসি নিউজ এবং প্রথম আলো’র আদলে তৈরি পৃথক পৃথক ফটোকার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দুই ফটোকার্ড প্রকাশ করে শামসু্দ্দোহা বারি নামে এক ব্যক্তি জনাব জাহেরকে তার পোস্টে (আর্কাইভ) মেনশন করেছেন, জানিয়েছেন শুভকামনাও।

ডিবিসি’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে প্রথম আলো’র ডিজাইন সম্বলিত ফটোকার্ডে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘কুমিল্লা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপ বা ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে আছে দাবি করে ডিবিসি কিংবা প্রথম আলো কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত ফটোকার্ড দুটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
ডিবিসি কি উক্ত শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
অনুসন্ধানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করেও উক্ত শিরোনামে বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, ডিবিসি’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির ডিজাইনের সাথে ডিবিসির ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ডিবিসির পেজে প্রকাশিত ফটোকার্ডগুলোতে আলোচিত ফটোকার্ডের মত পুরো লাল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এছাড়াও শিরোনামের ফন্ট ডিজাইন ও ছবি ব্যবহারের ধরণেও ভিন্নতা রয়েছে।
প্রথম আলো কি উক্ত শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে?
অনুসন্ধানের শুরুতে ‘প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের আদলে তৈরি ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ৩ জানুয়ারি ২০২৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা লোগো ও তারিখের সূত্র ধরে ‘প্রথম আলো’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ৩ জানুয়ারি বা তার আগে বা পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও দেখা যায়, ৩ জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’র ফেসবুক পেজে রাজনীতি ক্যাটাগরিতে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়নি এবং আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে তাদের ফটোকার্ডের ডিজাইনেরও পার্থক্যের পাশাপাশি ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্ট ডিজাইনের সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
তাছাড়া প্রথম আলো’র ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যালোচনা করেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পত্রিকাটির অনলাইন ভোট সেকশনেও গত কিছুদিনে এ সংক্রান্ত কোনো জরিপের তথ্য মেলেনি।
এ সংক্রান্ত কোনো জনমত বা জরিপের খবর গণমাধ্যমে না পেয়ে আমরা কুমিল্লার একাধিক সাংবাদিকের সাথেও কথা বলেছি এ বিষয়ে। তারা কেউই এমন কোনো জরিপের তথ্যের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন৷
মূলত, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রচারণার একটি বড় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি, ‘কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং – ব্রাহ্মনপাড়া) আসনে জনমত জরিপে এগিয়ে এম এ জাহের’ এবং ‘কুমিল্লা-৫ ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে এম এ জাহের’ শীর্ষক শিরোনামে ডিবিসি ও প্রথম আলো’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত দুটো ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দৈনিক প্রথম আলো কিংবা ডিবিসি তাদের ফেসবুক পেজে উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ডিবিসি ও প্রথম আলোর ডিজাইন নকল করে আলোচিত ফটোকার্ড দুটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, কুমিল্লা-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন দাবিতে ডিবিসি এবং প্রথম আলো’র নামে প্রচারিত ফটোকার্ড দুইটি ভুয়া ও বানোয়াট।