সম্প্রতি ‘পুলিশ হত্যার বিচার না হলে আওয়ামীলীগের মিছিলে বাধা দিবে না পুলিশ- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পুলিশ কমিশনার’ শীর্ষক শিরোনামে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের ছবি যুক্ত করে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড এবং ‘পুলিশ হত্যার বিচার না হলে আওয়ামী লীগের মিছিলে বাধা দিতে পারবে না ডি এম পি ডি এম পি কমিশনার’ শীর্ষক শিরোনামে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর ছবি যুক্ত করে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

প্রথম আলোর ফটোকার্ড যুক্ত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

যমুনা টিভির ফটোকার্ড যুক্ত ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ‘পুলিশ হত্যার বিচার না হলে আওয়ামীলীগের মিছিলে বাধা দিবে না পুলিশ- স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পুলিশ কমিশনার বা আইজিপি’ এই শিরোনামে প্রথম আলো বা যমুনা টিভি কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি। মূলত, গণমাধ্যম দুটির ফেসবুক পেজে নিয়মিতভাবে প্রচারিত ফটোকার্ডের ডিজাইনের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে।
প্রথম আলোর ফটোকার্ড যাচাই
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে এতে প্রথম আলোর লোগো এবং এটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ উল্লেখ পাওয়া যায়।
উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উল্লিখিত তারিখে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, প্রথম আলোর প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

তবে, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে গত ১৯ এপ্রিল ‘মিথ্যা প্রচারণা’ শিরোনাম প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ফটোকার্ডটি যুক্ত উক্ত ফটোকার্ডটি থেকে জানা যায়, প্রথম আলোর নামে ছড়ানো ওই তথ্য ও কার্ডটি নকল, এটি তাদের তৈরি নয়।
অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটির এমন একটি স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে ফটোকার্ডটি ২৬ মিনিট পূর্বে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এবং এতে ১৭২টি প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই একটি স্ক্রিনশটই একাধিক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়েছে।

কিন্তু আলোচিত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা হলে সেটির বিভিন্ন সময়ের স্ক্রিনশট ফেসবুকে পাওয়া যেত, কিন্তু তা ঘটেনি। এর ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, এই স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত। প্রথম আলোর পেজে ২৬ মিনিট পূর্বে প্রচারিত ও ১৭২টি প্রতিক্রিয়া যুক্ত কোনো পোস্টের স্ক্রিনশটে ছবির স্থলে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা আলোচিত ফটোকার্ডটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
যমুনা টিভির ফটোকার্ড যাচাই
অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফটোকার্ডটিতে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটি প্রকাশের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি যা যমুনা টিভির নিয়মিতভাবে প্রকাশিত ফটোকার্ডে করা হয়ে থাকে।
অনুসন্ধানে যমুনা টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উল্লিখিত তারিখে উক্ত শিরোনাম সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, যমুনা টিভির ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, যমুনা টিভির প্রচলিত ফটোকার্ডের শিরোনামের ফন্টের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডটির ফন্টের পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।

অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, পুলিশ হত্যার বিচার না হলে আওয়ামীলীগের মিছিলে পুলিশের বাধা না দেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো ও যমুনা টিভির নামে প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো বানোয়াট ও মিথ্যা৷
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo – Facebook Post
- Jamuna TV – Facebook Page
- Jamuna TV – Website
- Jamuna TV – YouTube Channel