সম্প্রতি, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে” শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য দাবিতে মূলধারার গণমাধ্যম এনটিভি’র আদলে তৈরি একটি ফটোকার্ডের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি এবং এনটিভিও উক্ত শিরোনামে কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে এনটিভি’র আদলে তৈরি করা আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আলোচিত ফটোকার্ডটিতে থাকা তারিখ এবং এনটিভি’র লোগোর সূত্র ধরে এনটিভি’র ওয়েবসাইট, ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত ফটোকার্ডগুলো পর্যালোচনা করে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘মাকিন ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে গণমাধ্যমও : পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড এবং এর কমেন্টে একই শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘আগামীতে গণমাধ্যমও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গত ২৪ সেপ্টেম্বর চ্যানেল টুয়েন্টিফোর কার্যালয়ে এক টকশোতে তিনি এ কথা বলেন।’
এনটিভি’র এই ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের ডিজাইন এবং ফটোকার্ডে থাকা তারিখ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাসের ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
অর্থাৎ, এনটিভি’র ফেসবুক পেজে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত এই ফটোকার্ডটির শিরোনাম এডিট করে তাতে ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।
মূলত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ভিসানীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হতে পারে বলে জানান। এরই প্রেক্ষিতে এনটিভি’র ফেসবুক পেজে ‘মার্কিন ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে গণমাধ্যমও: পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনামে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ফটোকার্ডটির শিরোনাম বিকৃত করে তাতে ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে : পিটার হাস’ শীর্ষক শিরোনাম যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
গত আট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, মূলধারার গণমাধ্যম এনটিভিকে উদ্ধৃত করে ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে’ শীর্ষক দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- NTV : Facebook Page
- NTV: Website
- NTV: YouTube Channel
- U.S. Department Of State Press Release
- Rumor Scanner’s Own Analysis