১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কিনেছেন শীর্ষক মন্তব্য ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক করেননি

গত ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন ঢাবি ছাত্রশিবির শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় আলোচনার ঝড়। তার দুদিন পেরোতে না পেরোতেই গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হয় ঢাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের নাম। এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে এস এম ফরহাদের ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এস এম ফরহাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তিনি(ফরহাদ) ২০২২ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।” এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের পদ ঘোষণার একটি বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে এস এম ফরহাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দেখা যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে মূলত গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে একটি দাবি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। দাবি প্রচার করা হচ্ছে, ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “সংগঠনের ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কিনেছি নিজের ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের ভিত্তি মজবুত করার জন্য।”

শিবিরের সাধারণ সম্পাদক

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের নাম থাকলেও ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কেনার প্রসঙ্গে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য এস এম ফরহাদ করেননি বরং কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ফরহাদ জানান, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবির জন্য কোনো সিভি (জীবনবৃত্তান্ত) তিনি কখনো কাউকে দেননি।

অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিটি প্রচার করা ফেসবুক পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করতে দেখা যায়। 

তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগে পদ কেনার বিষয়ে ফরহাদের মন্তব্যের দাবির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগে পদের প্রসঙ্গে ফরহাদের বলা মন্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’তে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে “ছাত্রলীগের পদ নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “ছাত্রলীগের একটি কমিটিতে একসময় পদ থাকা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি জেনারেল এস এম ফরহাদ। তিনি দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। আজ সোমবার (গত ২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথাগুলো বলেন ফরহাদ। […] ফরহাদ আজ (গত ২৩ সেপ্টেম্বর) বিবৃতিতে বলেন, ‘সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবির জন্য কোনো সিভি (জীবনবৃত্তান্ত) আমি কখনো কাউকে দিইনি। বিভাগ-ইনস্টিটিউটের কমিটিতে কাকে রাখা হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনের সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে, যেখানে আমি ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই।’

ফরহাদ আরও বলেন, বিষয়টিকে তাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের চেতনা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন। ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ছবিতে ডিবেটিং ক্লাবের একটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে তানভীর হাসান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব সিরাজীর পাশে ফরহাদকে বসতে দেখা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফরহাদ। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি হল ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় বিতর্কের বিভিন্ন আয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিত থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, যার সব কটিই ছিল ডিবেটিং ক্লাবসংশ্লিষ্ট আয়োজন, কোনো রাজনৈতিক আয়োজন নয়।’”

একই তথ্য মূলধারার সংবাদমাধ্যম নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটে গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়। 

অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সাথে ফরহাদ সম্পৃক্ততা অস্বীকার করছেন। টাকা দিয়ে পদ কেনার কোনো মন্তব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। 

উল্লেখ্য যে, এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন দাবি প্রচার হলে ছাত্রলীগ নেতা এস এম ফরহাদ হোসেন নিজেই ফেসবুকের এক পোস্টে নিশ্চিত করেন দুইজন আলাদা ব্যক্তি।

সুতরাং, “সংগঠনের ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কিনেছি নিজের ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের ভিত্তি মজবুত করার জন্য।” শীর্ষক মন্তব্য ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদক করেছেন মর্মে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img