সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকায় সম্প্রতি কোনো কাশবন পুড়িয়ে ফেলা হয়নি

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি সংযুক্ত করে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকায় একব্যক্তির জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠে কাশবন। এই কাশবনে অশ্লীল- অসামাজিক কর্মকাণ্ড হয় এমন অভিযোগে গত শুক্রবার স্থানীয় লোকজন কাশবনটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে। এলাকাবাসী বলছেন, কাশবন দেখার নাম করে অনেকেই এলাকায় অশ্লীল-অসামাজিক কর্মকাণ্ড করছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকার কোনো কাশবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি। বরং কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে নির্ভরযোগ্য বা গণমাধ্যম সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকায় কোনো কাশবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো সংবাদ পাওয়া না গেলেও ২০২১ সালের বেশ কিছু সংবাদ পাওয়া যায়। ২০২১ সালের ০২ অক্টোবর তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’তে “কাশবনে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে আগুন দিলেন এলাকাবাসী” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকার কাশবনে স্থানীয় লোকজন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার (২০২১ সালের ০১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কাশবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর দাবি, কাশবনে অশ্লীল কর্মকাণ্ড হয়। এসব কর্মকাণ্ড এড়াতে তাঁরা কাশবনে আগুন দিয়েছেন।

উক্ত প্রতিবেদনে প্রথম আলো একটি ছবিও সংযুক্ত করে প্রচার করে। ছবিটি সংগৃহীত উল্লেখ করে ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকায় কাশবনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। 

উল্লেখ্য, উক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের সংযুক্ত ছবির মিল পাওয়া যায়নি। প্রথম আলোতে সংযুক্ত ছবিটি সন্ধ্যা বা রাতে ধারণকৃত হলেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি দিনে বা সম্ভাব্য বিকেলে ধারণকৃত ভিন্ন ছবি। 

Comparison : Rumor Scanner

প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবিটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তাই, এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার অনলাইন মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল জি ভয়েস টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক ও প্রকাশক সামিল হোসেনের সাথে। প্রচারিত ছবিটিসহ আলোচিত দাবিটি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, “প্রথমত এই ছবিটি (প্রচারিত ছবিটি) গোলাপগঞ্জের না। দ্বিতীয়ত এইরকম কোন ঘটনা এখানে ঘটে নি। এমনকি আমার ঐ এলাকার কয়েকজনের সাথেও কথা হয়েছে। তারা বলেছে পূর্বের মতো কাশফুল নেই এখানে, এমনকি এরকম ঘটনাও সম্প্রতি ঘটে নি। তবে, ২০২১ সালে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল।” এসময় তিনি জি ভয়েস২৪ এ প্রকাশিত ২০২১ সালের উক্ত ঘটনার একটি প্রতিবেদন সরবরাহ করেন। প্রতিবেদনটি পড়ে জানা যায়, গোলাপগঞ্জের কাশবনে ২০২১ সালের ১ অক্টোবর তারিখে অশ্লীলতা বন্ধের দাবিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উক্ত প্রতিবেদনেও সন্ধ্যা বা রাতের সময়ে কাশবন আগুনে পোড়ার সময়ের একটি ছবি সংযুক্ত করা হয়।

একই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় গোলাপগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক ভোরের কাগজ ও দৈনিক শুভ প্রতিদিনের রিপোর্টার জাহিদ উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, “এটি (সাম্প্রতিক সময়ে চৌঘরী এলাকার কাশবন পুড়ানোর বিষয়) গুজব। গোলাপগঞ্জের কাশবন পুড়ানো হয়নি। এটা (প্রচারিত ছবিটি) অন্য জায়গায় হতে পারে। এগুলো আজকের (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) ছবি (তিনি ঐ স্থানের কয়েকটি ছবিও সরবরাহ করেন)৷ এটা (কাশবন) ২০২১ সালে এলাকাবাসী জ্বালিয়ে ছিল। এটায় নতুন করে আবার কাশফুল উঠেছে। আর চৌঘরী এলাকায় এটাই একমাত্র কাশবন।”

জাহিদ উদ্দিনের সরবরাহকৃত উক্ত কাশবনের সাম্প্রতিক সময়ের ছবি

সুতরাং, সিলেটের গোলাপগঞ্জের চৌঘরী এলাকার কাশবন সাম্প্রতিক সময়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img