শুক্রবার, মে 23, 2025

প্রশাসনকে সেনাপ্রধানের নির্দেশ দাবিতে ভুয়া তথ্য প্রচার

সম্প্রতি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “সেনা প্রধান স্যার আজকে তার বক্তব্যে যে তথ্য ও নির্দেশনা দিলেন প্রশাসনকে –

১৷ বিনা অপরাধে আর কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা যাবে না ৷ 

২৷যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা মনে হয় তাহলে ঐ মামলা নেওয়া হবে না ৷ 

৩৷ পুলিশ সহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারোও আজ্ঞাবহ হবে না ৷ তারা তাদের কাজ স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবে। 

৪৷ সবার রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং করার সমান অধিকার থাকবে ৷ 

৫৷ মব সহ্য করা হবে না ৷ কারো বাড়িঘর হামলা,ভাংচুর,লুটপাট বরদাস্ত করা হবে না৷ 

৬৷ ফ্রি -ফেয়ার ইলেকশনর জন্য যা  করনীয় যতদূর যেতে হয় সেনা বাহিনী সে কাজ করবে এবং পুলিশ কারো নির্দেশনা অপেক্ষার না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর  অবস্থান নেবে।”

সেনাপ্রধানের

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত কিছু পোস্টে সেনাপ্রধানের একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে। এরূপ পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

একই দাবিতে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

এছাড়াও, এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে মব ভায়োলেন্সের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এছাড়াও বলেছেন সকল রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারবে এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরূপ দাবিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন : ইকোনমিক টাইমস

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি প্রশাসনকে সেনাপ্রধানের দেওয়া নির্দেশ মর্মে প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে রাজশাহী সেনানিবাসে দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার ২০২৪ সালের আগস্টের ভিডিও প্রচার করে তাতে মনগড়া ক্যাপশন সংযুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনকে দেওয়া সেনাপ্রধানের নির্দেশ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায় গত অন্তত ২৫ এপ্রিল থেকে আলোচিত দাবিটি “আজকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে প্রশাসনকে দেওয়া নির্দেশনা’ শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে গণমাধ্যম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে গত ২৫ এপ্রিল বা সমসাময়িক সময়ে সেনাপ্রধানকে এরূপ কোনো বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে মূলধারার সংবাদমাধ্যম দীপ্ত টিভি নিউজের ফেসবুক পেজে ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট “জীবন বিপন্ন সাবেক মন্ত্রী এমপিদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে: সেনাপ্রধান” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটিতে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের একটি অংশও সংযুক্ত করা হয়, যার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে থাকা সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি মূলত উক্ত দিনের বক্তব্যেরই। সংবাদ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সেনাপ্রধান গত বছরের ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আলোচিত বক্তব্য দেন। তার উক্ত বক্তব্যের একটি দীর্ঘায়িত সংস্করণ সাংবাদিক ‘Md Ziaul Gani‘র ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ও মূলধারার গণমাধ্যম ‘বায়ান্ন টিভি‘র ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়। তবে সেনাপ্রধানের উক্ত বক্তব্যের সাথে ক্যাপশনের দাবির ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। মূল ভিডিওতে সেনাপ্রধানকে মূলত ভাঙচুর করতে নিরুৎসাহিত করতে দেখা যায় এবং বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হবে না বলে চাওয়া প্রকাশ করাসহ দেশের সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, প্রায় ৯ মাস পূর্বের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের একটি ভিডিওতে মনগড়া ক্যাপশন সংযুক্ত করে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তী অনুসন্ধানে গত ২৭ এপ্রিলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের দুইটি স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে প্রচারিত দাবিকে গুজব বলে নিশ্চিত করতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনকে সেনাপ্রধানের এমন প্রকাশ্য নির্দেশনা দিতে না দেখা গেলেও পূর্বে নানাসময়ে তাকে নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিতে, ১৮ মাসের নির্বাচনে দেশ ধাবিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করতে ও ভাঙচুরে নিরুৎসাহিত করতে দেখা যায়।

সুতরাং, প্রায় ৯ মাস পুরোনো সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ভিডিওতে ভুয়া ক্যাপশন সংযুক্ত করে সম্প্রতি প্রশাসনকে দেওয়া সেনাপ্রধানের নির্দেশনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

হালনাগাদ/ Update

৩০ এপ্রিল, ২০২৫ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে একই দাবি সম্বলিত টিকটক পোস্ট আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে উক্ত পোস্ট প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।

আরও পড়ুন

spot_img